মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তবে আমি তার হাত কেটে ফেলতাম


"যার অধিকারে আমার প্রাণ সেই আল্লাহর শপথ ! মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তবে আমি তার হাত কেটে ফেলতাম।”কে ওস্তাদ, কে হুজুর ,কে আলেম, কে সম্মানীয়, কে ধনী ,কে গরীব বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইসলাম এগুলোর কোন তোয়াক্কা করে না।সকলের জন্য একই বিধান

পবিত্র কোরআন এর দলিলঃ
যে পুরুষ বা নারী চুরি করে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল আল্লাহর দেয়া বিধান- তাদের হাত কেটে দাও, এটা নিশ্চয়ই আল্লাহর মহা পরাক্রমাশালী প্রজ্ঞাময়।(সুরা মায়েদা-৩৮)

এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে হযরত ইবনে শিহাব (রহ) বলেনঃ মানুষের সম্পদ হরণের অপরাধে আল্লাহ পাক হাত কাটার বিধান স্হির করেছেন। আল্লাহ চোরের প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে পরাক্রমশালী। চোরের হাত কাটার শাস্তির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সম্পর্কে তিনিই সুবিজ্ঞ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কোন যিনাকারী যিনায় লিপ্ত অবস্হায় মুমিন থাকেনা। কোন চোর মুমিন অবস্হায় চুরি করে না। তবে তওবা করার পর সে ঈমান ফিরে পায়। (আবু দাউদ ও তিরমিযি)

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেনঃ “তিন দিরহাম মুল্যের একটি ঢাল চুরি করায় নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চোরের হাত কেটে দিয়েছিলেন।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম।)

আর এক বর্ননায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ” একটি ঢালের চেয়ে কম মূল্যের জিনিষ চুরি করলে হাত কাটা যাবেনা।” (মুসলিম, বুলুহুল মারাম)

উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চাওয়া হলোঃ এটি ঢালের দাম কত? তিনি বললেনঃ এক দিনারের চার ভাগের এক ভাগ। আর এক রেওয়ায়েতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “এক দীনারের চার আনা পরিমাণ মুল্যমানের জিনিস চুরি করলে হাত কেটে দাও, এর কম হলে নয়।” সেকালে দীনারের মান ছিল- এক দিনার সমান ১২ দিরহাম। এ হিসাবে এক দীনারের চার আনা সমান ৩ দিরহাম।

হযরত আবু হোরায়রা রাঃ বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ চোরের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দিয়ে থাকেন। সে যদি একটি লোহার রিংও চুরি করে তবে তার হাত কেটে দাও এবং (সামান্য) রশি চুরি করলেও হাত কেটে দাও। (বোখারী, মুসলিম, মেশকাত)

হযরত আয়েশা রাঃ বলেনঃ মখযুম গোত্রের এক মহিলা বিভিন্ন বস্তু ধার করে পরে তা অস্বীকার করতো। (এ অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায়) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। তার আত্মীয়-স্বজনরা উসামা বিন যায়দ রাঃ এর কাছে গিয়ে উক্ত মহিলাকে অব্যাহতি দানের জন্য সুপারিশ করতে অনুরোধ জানালো। উসামা সুপারিশ করায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ওহে উসামা! আমি আল্লাহ পাকের সুনির্ধারিত দন্ডের ব্যাপারে তোমাকে সুপারিশ করতে দেখতে চাইনা। ” অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ঘোষনা দিয়ে বললেনঃ “তোমাদের আগেকার জাতিগুলো কেবল এজন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে অভিজাত কোন ব্যক্তি চুরি করলে তাকে তারা নিষ্কৃতি দিত। আর অপেক্ষাকৃত কোন লোক চুরি করলে তার হত কেটে দিত। যার অধিকারে আমার প্রাণ সেই আল্লাহর শপথ ! মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তবে আমি তার হাত কেটে ফেলতাম।”অতঃপর মাখযুম গোত্রের সেই মহিলার হাত কেটে ফেলা হলো। (সহীহ বোখারী ও মুসলিম)

হযরত আবদুর রহমান ইবনে জারীর রাঃ বলেনঃ আমরা ফযালা বিন উবাইদের রাঃ কাছে জানতে চাইলাম, চোরের হাত কেটে সেই হাত কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়া কি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত দ্বারা অনুমোদিত? জবাবে তিনি বললেনঃ চোরকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্হিত করা হলে তার হাত কেটে ফেলা হতো। অতঃপর তাঁর নির্দেশে সেই কর্তিত হাত তার গর্দানে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। (তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসায়ী)
ওলামায়ে কেরাম বলেনঃ চুরি করা জিনিস তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত চোরের তওবায় কোন ফল লাভ হবে না। তবে চোর দরিদ্র ও অক্ষম হলে মালিকের কাছ থেকে যে কোন উপায়ে হোক দায়মুক্ত করে নিতে হবে।

(সুত্রঃ কিতাবুল কাবায়ের বা কবিরা গুনাহঃ ইমাম আযযাহবী।)

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.