দাওয়াহ

Image may contain: one or more people and text

এক,
অনলাইনে আমরা অনেকেই দ্বীনের ভিবিন্ন বিষয় নিয়ে লিখালিখি করি! এতে আপনার, আমার লিখনী দ্বারা কিছু মানুষ উপকৃত হচ্ছে, কেউবা প্রভাবিত হয়ে নিজেকে সংশোধন করে নিচ্ছে, বেদ্বীনী থেকে দ্বীনের দিকে ফিরে আসছে, কারো হয়তবা আক্বীদা, মানহাজে, আমল, আখলাকে পরিবর্তন আসছে![আলহামদুলিল্লাহ ]
সংশোধনে এই দাওয়াতি যাত্রা অব্যহত থাকুক এটাই কাম্য! কিন্তু, অন্যকে ইসলাহ (সংশোধন) করতে গিয়ে যেন আমরা নিজেরাই অসংশোধিত থেকে না যাই ! আমাদের ব্যক্তিজীবন যেন সর্বদা নিজ টাইমলাইনের মত হয়! কেননা আমলবিহীন দ্বায়ীকে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের (জাহান্নামীদের) অন্তর্ভুক্ত বলে আগাম সতর্কবানী শুনানো হয়েছে!
 ওসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِي النَّارِ فَيُطْحَنُ فِيْهَا كَطَحْنِ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ فَيَقُولُونَ أَيْ فُلاَنُ مَا شَأْنُكَ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَانَا عَنْ الْمُنْكَرِ قَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ.
'এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে করে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনিভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজেই তা করতাম না। আর খারাপ কাজ হ’তে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম, কিন্তু আমি নিজেই তা করতাম’।
📚 (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৯, ৯ম খন্ড হা/৪৯১২ ‘আদব’ অধ্যায়, ‘সৎ কাজের নির্দেশ’ অনুচ্ছেদ)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঐ সব দ্বায়ীগণ জাহান্নামে যাবে, যারা নিজ বক্তব্য, লিখনী,দাওয়াহ অনুযায়ী নিজে আমল করে না এবং নিজের পরিবার পরিজনকে সে অনুযায়ী আমল করতে বাধ্য করে না।
.
আপনার দাওয়াহ এর উদ্দেশ্য যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়! আপনি নিজেই সবচেয়ে ভাল জানেন, আপনি কি উদ্দেশ্যে ভিবিন্ন আর্টিকেল, ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে লিখালিখি করেন ! মনে রাখবেন 'সেলিব্রিটি' বিমারী যদি আপনাকে একবার পেয়ে বসে তাহলে এত ভাল লিখালিখি করেও আপনার একাউন্টে কোন নেকী জমা হবেনা! কেননা 'রিয়া' মিশ্রিত আমল যত সুন্দরই হোক না কেন তা আল্লাহর নিকট অগ্রহণযোগ্য!
.
দুই,
এমন সেলিব্রেটি হয়ে কি লাভ, যদি ফেসবুকের জনপ্রিয়তা আপনাকে আমলে গাফেল করে দেয়!
যদি আপনার মন নামাযে স্থির না থেকে অনলাইন জগতে আটকে থাকে! যদি ফেসবুকে লিখতে লিখতে নামাযের আওয়াল ওয়াক্ত চলে যায়!
যদি দাওয়াহ (!) এর কাজ করতে গিয়ে একটু কোরআন তিলাওয়াতেরও সময় পাওয়া না যায়?
কি লাভ এমন ইসলামিক সেলিব্রেটি হয়ে??
এই জনপ্রিয়তা অসম্মানের! এই জনপ্রিয়তা লজ্জার!
এই জনপ্রিয়তা ক্ষনিকের!
.
অনেক দ্বীনী ভাই/বোনদের দেখি 'দাওয়াহ' এর জন্য
ঘন্টার পর ঘন্টা ফেসবুকে পড়ে থাকেন! অনেকেই ফ্রেন্ডলিস্টে গায়রে মাহরাম (কথিত দ্বীনী বোন) এর সাথে funny comment বিনিময় করেন, ইনবক্সে রসালো আলাপ করেন, আবার পর্দার উপর বিশাল আর্টিকেলও পোস্ট করেন!
যেইব্যক্তি নামাযের গুরুত্ব নিয়ে নাসিহা দিতে গিয়ে এত লম্বা আর্টিকেল রচনা করলেন, তিনিই আবার নামাযের আওয়াল ওয়াক্ত পার করে দেন!
[আল্লাহ সবাইকে এই ফিতনা থেকে হিফাযত করুন]
কি লাভ এই খেদমতের? কি ফায়দা এই লিখনীর?
 মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ- كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ.
হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক।
[ছফ ২-৩]
.
তিন,
মুমিনের জীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম! যদি আপনার, আমার ভিবিন্ন লিখনী,বক্তব্য শুধুমাত্র ইসলামিক সেলিব্রেটি কিংবা লোক দেখানোর জন্য হয় তবে তা যত হৃদয়গ্রাহীই হোক না কেন এইসব বক্তব্য, লিখনী,ভুরি ভুরি আর্টিকেলের দু'পয়সার মূল্যও আল্লাহর কাছে নেই!
আপনি যদি একজন আল্লাহভীরু মানুষ হন, তাহলে অবশ্যই সারাক্ষণ অনলাইনে পড়ে না থেকে বরং তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারন করবেন! ফেসবুকেই যদি দাওয়াহ দিতে হয় তবে ফিতনার উৎস গুলো বন্ধ করে রাখবেন এবং যে দাওয়াহ অনলাইনে দিচ্ছেন তা আপনার ব্যক্তি জীবনে ও পারিবারিক জীবনে কতটুকু প্রতিফলিত হচ্ছে সেদিকেও খেয়াল রাখবেন!
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সিরাহ, সাহাবা কেরামের জীবনী এবং তাবেঈনদের কর্মগুলো দেখলেই বুঝা সম্ভব তাঁরা সময়ের প্রতি কত গুরুত্বদানকারী ও নিয়মানুবর্তী ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত এই জীবনে অনর্থক কথা, কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখার মত সময় নেই বললেই চলে! মুমিনের জীবনের সৌন্দর্যই হলো অহেতুক কথা, কাজ পরিহার করা! মৃত্যুর পরের জবাবদিহিতা সম্পর্কে যেহেতু কোন মুসলমানেরই সন্দেহ নেই, সুতরাং পার্থিব জীবনের প্রতিক্ষণই যাতে নেক কাজে ব্যয় যায়, সেজন্য সচেষ্ট থাকা প্রত্যেক মুসলমানের আবশ্যকীয় কর্তব্য!
ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলতেন -
ﺃَﻋْﻘَﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦْ ﺗَﺮَﻙَ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﺘْﺮَﻛَﻪُ، ﻭَﺃَﻧَﺎﺭَ ﻗَﺒْﺮَﻩُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُّﺴْﻜِﻨَﻪُ، ﻭَﺃَﺭْﺿَﻰ ﺭَﺑَّﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَّﻠْﻘَﺎﻩُ
ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔَ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﺼَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔُ، ﻭَﺣَﺎﺳَﺐَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﺤَﺎﺳَﺒَﻪُ
‘সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি সে-ই যে দুনিয়াকে পরিত্যাগ করে দুনিয়া তাকে পরিত্যাগ করার পূর্বেই। কবরকে আলোকিত করে কবরে বসবাস করার পূর্বেই। স্বীয় প্রভুকে সন্তুষ্ট করে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ লাভের পূর্বেই, জামা‘আতে ছালাত আদায় করে তার উপর জামা‘আতে ছালাত (অর্থাৎ জানাযার ছালাত) পঠিত হবার পূর্বেই। নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করে হিসাব দিবসে তার হিসাব গ্রহণ করার পূর্বেই’।
📚 [ইগাছাতুল লাহফান -১/৭৯]
.
চার,
সর্বদা মনে রাখবেন - ক্ষণস্থায়ী এই জীবনেই চিরস্থায়ী জীবনের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে! তাই কিছু সময় আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সঁপে দিন। ফেসবুক, Whatsapp, imo, টুইটার, ইউটিউব ছেড়ে প্রতিদিন কিছু সময় একলা কাটান! নিজের আত্নসমালোচনা করুন এবং আপনার রবের সাথে নিরবে কথা বলুন!
আপনার জেনে রাখা জরুরী যে, আত্নসমালোচনার পথে 'মানুষের প্রশংসা ' বড় বাধা হয়ে দাড়ায়!
শয়তান হয়ত আপনাকে সরাসরি যেনা, মদ, জুয়া কিংবা শিরিক,বিদায়াত, কুফরিতে লিপ্ত করাতে পারবেনা কিন্তু 'নেক ছুরতে' ধোকা দিতে সক্ষম!
.
জান্নাতি মানুষের দুনিয়াবী ছুরত হল, সে সর্বদা শয়তানের সাথে জিহাদরত অবস্থায় থাকে! যারাই ইহকালে ও পরকালে সফলতা অর্জন করেছিল, তাদের গতকালের চেয়ে আজকের দিনটি উত্তম ছিল!
আপনিও নিজেকে প্রশ্ন করুণ, আপনার গতকালের চেয়ে আজকের দিনটি উত্তম কেটেছে কিনা? কালকে চেয়ে আজকে রবের ইবাদতে বেশি সময় ব্যায় করেছেন কিনা? শুধুমাত্র আজকের হিসেব কষলেই বুঝতে পারবেন আপনার গন্তব্যপথ কোনদিকে!
আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব আল্লাহর
কাছে দিতে হবে, ছোট/বড় কোন কর্মই লুকানোর
সুযোগ নেই! এখনও যেহেতু আপনার, আমার শ্বাস-প্রশ্বাস চলমান রয়েছে, অতএব, আসুন চিন্তাশীল হই।
 মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে
পাবে,এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।”
[সূরা যিলযালঃ৭-৮]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা- আমাদের সবাইকে উপরোক্ত বিষয়াদি অনুধাবনের তাওফ্বিক দিন, আমাদের অন্তরসমুহকে ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে গন্য করার তাক্বওয়াটুকু দান করুণ, আমাদের অন্তরকে যেন শয়তানের জিম্মায় ছেড়ে না দেন! সর্বপরি, আমাদের সবাইকে দ্বীনের সাথে আমাদের অন্তরকে বেঁধে রাখার শক্তি ও ঈমান দান করে
জাহান্নামের ইন্দন হওয়া থেকে রক্ষা করুণ
[আ-মী-ন]
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ও দ্বীনীভাই,
আখতার বিন আমীর।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.