I LOVE YOU বললে রোযা থাকবে কি তার বিধান

I LOVE YOU বললে রোযা থাকবে কি তার বিধান

উত্তর প্রদানে : সাজ্জাদ সালাদীন।

GF বা BF কেউ যদি রোযা থাকা অবস্থায় বলে I Love you তাহলে রোযা হবে কি না সন্দেহ আছে। তবে স্ত্রীকে I love you বললে রোযা থাকবে। তাতে রোযার কোন অসুবিধা হবে না। তাই সেটা হুজুরই হোক বা সাধারন মানুষই হোক। মনে রাখতে হবে হুজুররাও মানুষ। সয়ং রাসূল (সা:) ও স্ত্রীদের সাথে মজা করেছিলেন রোযা অবস্থায়। বহু হাদীস মওজুদ রয়েছে। যেমন : হাদীসে এসেছে -
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ الْجَرَّاحِ قَالَا حَدَّثَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلَاقَةَ عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُ فِي شَهْرِ الصَّوْمِ
‘আয়িশাহ্ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা:) রমযান মাসে চুমা দিতেন। তাহকীক আলবানী : সহীহ। [বুখারী, হা : ১৯২৭, মুসলিম হা : ২৬৩০, মুসনাদে আহমদ, হা : ২৪২২০, ইবনে মাজাহ, হা : ১৬৮৩, সহীহ ইরওয়াহ, হা : ৪/৮২
রোযা অবস্থায় স্ত্রী দেহ স্পর্শ করা যায়
হাদীসে এসেছে -
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا إِسْمَعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ عَنْ ابْنِ عَوْنٍ عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ دَخَلَ الْأَسْوَدُ وَمَسْرُوقٌ عَلَى عَائِشَةَ فَقَالَا أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ قَالَتْ كَانَ يَفْعَلُ وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لِإِرْبِهِ
ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসওয়াদ ও মাসরূক ‘আয়িশাহ্ (রা:) - এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) রোযারত অবস্থায় কি স্ত্রীর দেহের সাথে নিজ দেহ মিলাতেন? তিনি বলেন, তিনি তা করতেন। আর তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সংযমী। [ইবনু মাজাহ, হা : ১৬৮৭, ইরওয়াহ ৪/৮১] তাহকীক আলবানী : সহীহ
উপরোক্ত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, স্ত্রীকে I Love you বললে রোযা সমস্যা হবে না এমন কি স্ত্রী চুমা দেয়া ও আলিঙ্গন করাও যাবে। তাই আসুন শরীয়ত বিধি মোতাবেক আমরা চলার চেষ্টা করি, আমীন।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ
তবে উত্তেজনা বশবর্তী হয়ে কেউ যদি স্ত্রী সহবাস করে ফেলে তাহলে বিপদ আছে। তার জন্য কাফফারা প্রয়োজন। তবে অতি দরিদ্র অবস্থায় কাফফারা নেই। এ ক্ষেত্রে করনীয় দিক কি হবে তার সমাধান হাদীসে দেয়া হয়েছে। নিম্নে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
রোজার কাফফারা
এটি সবচেয়ে বড় রোযা নষ্টকারী বিষয় ও এতে লিপ্ত হলে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয়। যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলা স্বেচ্ছায় স্ত্রী সহবাস করবে অর্থাৎ দুই খতনার স্থানদ্বয়ের মিলন ঘটাবে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ লজ্জাস্থানের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে সে তার রোযা নষ্ট করল; এতে করে বীর্যপাত হোক কিংবা না হোক। তার উপর তওবা করা, সেদিনের রোযা পূর্ণ করা, পরবর্তীতে এ দিনের রোযা কাযা করা ও কঠিন কাফফারা আদায় করা ফরয। এর দলিল হচ্ছে-
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَلَكْتُ قَالَ مَا لَكَ قَالَ وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي وَأَنَا صَائِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً تُعْتِقُهَا قَالَ لاَ قَالَ فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ قَالَ لاَ فَقَالَ فَهَلْ تَجِدُ إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا قَالَ لاَ قَالَ فَمَكَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ أُتِيَ النَّبِيُّ بِعَرَقٍ فِيهَا تَمْرٌ وَالْعَرَقُ الْمِكْتَلُ قَالَ أَيْنَ السَّائِلُ فَقَالَ أَنَا قَالَ خُذْهَا فَتَصَدَّقْ بِهِ فَقَالَ الرَّجُلُ أَعَلَى أَفْقَرَ مِنِّي يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَوَاللهِ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا يُرِيدُ الْحَرَّتَيْنِ أَهْلُ بَيْتٍ أَفْقَرُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي فَضَحِكَ النَّبِيُّ حَتَّى بَدَتْ أَنْيَابُهُ ثُمَّ قَالَ أَطْعِمْهُ أَهْلَكَ
আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা:) - এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহর রাসূল (সা:) বললেন : তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। আল্লাহর রাসূল বললেন : আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন : তুমি কি একাধারে দু’মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন : ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন নাবী (সা;) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নাবী (সা;) - এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নাবী বললেন : প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেন : এগুলো নিয়ে সদাকাহ করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চাইতেও বেশি অভাবগ্রস্থকে সদাকাহ করব? আল্লাহর শপথ, মাদ্বীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। আল্লাহর রাসূল (সা:) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। অত:পর তিনি বললেন : এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। [সহীহ বুখারী, হা : ১৯৩৬, সহীহ মুসলিম, হা : ১১১১]
কাফফারা পরিমাণ নির্ধারণ
এই খাদ্য সোয়া কেজি বা দেড় কেজি পরিমাণ হবে এবং প্রত্যক সমাজে যে খাদ্য প্রচলিত রয়েছে সে খাদ্যের মধ্যম মানের খাদ্য বিবেচ্য হবে। [মুগনী, ৪/৩৮২]। রোযাবস্থায় স্বেচ্ছায় স্ত্রীর সাথে সহবাসকারী যদি হাদীসে বর্ণিত সাহাবীর ন্যায় দরিদ্র ব্যক্তি হয়, তাহলে তার উপর কাফ্ফারা নেই। [মুগনী, ৪/৩৮৫]
শৈথিল্যবাদ
যদি সঙ্গমে স্ত্রী সম্মত ছিল, তাহলে তার প্রতিও উক্ত কাফ্ফারা জরুরী হবে। তবে যদি স্ত্রীকে স্বামী বাধ্য করেছিল কিংবা স্ত্রী এই বিধান জনতো না কিংবা সে রোযায় আছে তা ভুলে গিয়েছিল, তাহলে তার উপর শুধু কাযা জরুরি হবে কাফ্ফারা জরুরি হবে না। [শারহুল মুমতি, ইবনু উসায়মীন, ৬/৪০১]
স্ত্রী সহবাসে বৈধতার সময় সীমা নির্ধারন
উল্লেখ্য যে, রোযার মাসে রাতে (ইফতারির পর থেকে ফজর পর্যন্ত) স্ত্রী সহবাস বৈধ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أُهِلَّ لكم ليلةَ الصيامِ الرَّفَثُ إلى نسائِكم ৃ
“রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে।”
স্ত্রী সহবাসের পর জুনুবী (নাপাক) অবস্থায় ফযর প্রতিভাত হলে করণীয় কি?
রাতে স্ত্রী-সহবাসের পর ফযর হয়ে গেলে, তার রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। ফযর পর্যন্ত সে গোসল বিলম্ব করতে পারে। অত:পর গোসল করে নামায আদায় করবে ও রোযা রাখবে। হাদীসে এসেছে যে -
دَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ عَنْ مُطَرِّفٍ عَنْ الشَّعْبِيِّ عَنْ مَسْرُوقٍ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ্রيَبِيتُ جُنُبًا فَيَأْتِيهِ بِلَالٌ فَيُؤْذِنُهُ بِالصَّلَاةِ فَيَقُومُ فَيَغْتَسِلُ فَأَنْظُرُ إِلَى تَحَدُّرِ الْمَاءِ مِنْ رَأْسِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ فَأَسْمَعُ صَوْتَهُ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ.
قَالَ مُطَرِّفٌ فَقُلْتُ لِعَامِرٍ أَفِي رَمَضَانَ قَالَ رَمَضَانُ وَغَيْرُهُ سَوَاءٌ.
‘আয়িশাহ্ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা:) নাপাক অবস্থায় রাতে ঘুমাতেন। অতঃপর বিলাল তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাতের জন্য ডাকতেন। তখন তিনি উঠে গোসল করতেন। আমি তাঁর মাথা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তে দেখেছি। তারপর তিনি বের হয়ে যেতেন এবং ফজরের সালাতে আমি তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে পেতাম। মুতাররিফ বলেন, আমি ‘আমের - কে বললাম, তা কি রমযানে? তিনি বলেন, রমযান ও অন্য মাস একই সমান। [সহীহুল বুখারী, হা : ১৯২৬, ১৯৩০, ১৯৩২,মুসলিম, হা : ১১০৯, ১১১০, তিরমিযী, হা : ৭৭৯, আবূ দাউদ, হা : ২৩৮৮, ২৩৮৯, আহমাদ, হা : ২৩৫৪২, ২৩৫৫৪, ২৩৫৮৪, ২৩৮৬৪, ২৩৯০৮, ২৪১৬০, ২৪১৮৪, ২৪২৯৫, ২৪৭০০, ২৪৯৬৬, ২৪৯৮১, ২৫১৪৫, ২৫২৭৩, ২৫৩২৫, ২৫৩৯১, ২৫৫৫১, ২৫৬৬০, ২৫৭৬৬, ২৫৮৪০, ২৫৮৫৯, ২৫৯৪২, ২৬০৮৪, ২৬১২১, ২৬১২৪, মুয়াত্তা মালেক, হা : ৬৪১, ৬৪২, ৬৪৩,৬৪৪ দারেমী, হা : ১৭২৫] তাহকীক আলবানী : সহীহ।
উসংহার
সুতরাং, সুতরাং, বলা যায় যে, যে ব্যক্তির আশংকা রয়েছে যে, এমন করলে তার বীর্য বা মযী বের হবে কিংবা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে তার জন্য রোযাবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলি বৈধ হবে না। [ফতহুল বারী, ৪/১৯৩, সহীহ আবু দাঊদ, হা : ২০৬৫] বিশেষ করে নবদাম্পত্যকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.