Image may contain: text

❒ গাযওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর তাহক্বীক।

১ম হাদীস:

عَنْ ثَوْبَانَ ، مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللهُ مِنَ النَّارِ : عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ، عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ»
সাওবান (রাযি.) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন রাসূল স. বলেছেন, আমার উম্মাহর দু'টি দলকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন: একদল হল, যারা হিন্দে যুদ্ধ করবে, অপর দল হল, যারা ঈসা বিন মারয়াম (আ.) এর সাথে থাকবে।(মুসনাদে আহমাদ ২২৪৪৯; নাসায়ী ৩১৭৫;বাইহাকী 'আল-কুবরা' ১৮৩৮১;ইত্যাদি)
এই হাদীস সহীহ।
.
২য় হাদীস:
* عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضِيَ الله عنْهُ ، قَالَ : "وَعَدَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِى وَمَالِى وَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ أَفْضَلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ".
আবু হুরাইরাহ র. থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূল স. আমাদেরকে গাযওয়ায়ে হিন্দের অঙ্গীকার করেছেন।আমি তা পেলে তাতে আমার জান ও মাল খরচ করব।যদি শহীদ হয়ে যায় তবে আমি উত্তম শহীদ হব, আর যদি ফিরে আসি, তবে আবু হুরাইরাহ মুক্ত। (মুসনাদে আহমাদ ২১২৮; নাসায়ী ৩১৭৩)
এর সানাদ জঈফ। সানাদে জাবর বিন আবীদাহ নামক মাজহুল রাবী আছে।
যাহাবী তার সম্পর্কে বলেছেন, সে আবু হুরাইরাহ থেকে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছে।(মীযানুল ইতিদাল ১/৩৮৮, নাম্বার ১৪৩৬) আর এ হাদীস আবু হুরাইরাহ থেকে।তাই যাহাবীর কথানুযায়ী এ হাদীস মুনকার।

হাফেয ইবনে হাজার ইবনে হিব্বানের তাওসীক্বের উপর নির্ভর করে তাকে মাকবুল বলেছেন।(তাকরীব, নাম্বার ৮৯২)
শাইখ শুয়াইব ও বাশশার হাফেয ইবনে হাজারের এমতের সমালোচনায় বলেন, তার থেকে বর্ণনাকারী একজন। তাকে শুধু ইবনে হিব্বান তাওসীক্ব করেছেন।আর তিনি মাজহুল রাবীকে তাওসীক্ব করেন।তাই এ রাবী মাজহুল। (তাহরীরুত তাকরীব ১/২০৯)

এই হাদীস অন্য সানাদে ইবনে আবী আসেম তাঁর কিতাবুল জিহাদে (২/৬৬৮, নাম্বার ২৯১) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ সানাদও দুই কারণে জঈফ:
১) হাশেম বিন সাঈদ নামক জঈফ রাবী আছেন।
২) কেনানাহ বিন নাবীহ নামক জঈফ রাবী আছেন।আসকালানী যদিও তাকে মাকবুল বলেছেন কিন্তু সঠিক মতানুসারে তিনি জঈফ। যেমনটি শোয়াইব আরনাঊত ও বাশশার বলেছেন আসকালানীর সমালোচনায়।(তাহরীরুত তাকরীব ৩/২০১)
.
৩য় হাদীস:

* عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضِيَ الله عنْهُ ، قَالَ حَدَّثَنِى خَلِيلِى الصَّادِقُ رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يكُونُ فِى هَذِهِ الأُمَّةِ بَعْثٌ إِلَى السِّنْدِ وَالْهِنْدِ». "فَإِنْ أَنَا أَدْرَكْتُهُ فَاسْتَشْهَدْتُ فَذَلِكَ وَإِنْ أَنَا - فَذَكَرَ كَلِمَةً - رَجَعْتُ وَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ قَدْ أَعْتَقَنِى مِنَ النَّارِ".
আবু হুরাইরাহ র. থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, আমার সত্যবাদী বন্ধু রাসূল স. আমাকে বলেছেন, এ উম্মাহর একটি দল সিন্ধ ও হিন্দের দিকে যাবে।
আমি তা পেলে আমি শাহাদাত বরণ করলে, করলাম। আমি যদি -তারপর কিছু উল্লেখ করলেন- ফিরে আসি তো আমি আবু হুরাইরাহ মুক্ত। আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন।(আহমাদ ২২৪৪৯)

এ হাদীস দুই কারণে জঈফ:
১) বারা বিন আব্দুল্লাহ গানাবী নামক দুর্বল রাবী আছে।
২) হাসান বাসরী ও আবু হুরাইরাহ র. এর মাঝে ইনকিতা' বা বিচ্ছিন্নতা আছে।
.
৪র্থ হাদীস:

عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَمْرٍو ، عَن بعض المشيخة،عن ابي هريرةُ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : «يَغْزُو قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي الْهِنْدَ ، فَيَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يُلْقُوا بِمُلُوكِ الْهِنْدِ مَغْلُولِينَ فِي السَّلاسِلِ ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَهُمْ ذُنُوبَهُمْ ، فَيَنْصَرِفُونَ إِلَى الشَّامِ فَيَجِدُونَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ بِالشَّامِ».
সাফওয়ান বিন আমর বর্ণনা করেন তার শায়েখ থেকে, তিনি আবু হুরাইরাহ থেকে তিনি বলেন,নবী স. বলেছেন,আমার উম্মাহর একটি দল হিন্দে যুদ্ধ করবে।তারা হিন্দ জয় করবে আর হিন্দের রাজাদের জিঞ্জির দিয়ে বেঁধে ফেলা হবে। আল্লাহ তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।তারপর তারা সিরিয়া ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা বিন মারয়াম (আ:) কে পাবে।(নাঈম বিন হাম্মাদ, 'আল-ফিতান' ১২৩৬)

এ হাদীস দুই কারণে জঈফ:
১) বাকিয়ার তাদলীসে তাসবিয়াহর কারণে।
২) সাফওয়ান বিন আমরের উস্তায মাজহুল হওয়ার কারণে।

আবু হুরাইরাহ র. এর হাদীস কি হাসান পর্যায়ের হবে?
আবু হুরাইরাহ র. এর হাদীস মুতাবে' দ্বারা হাসান হবে না।কারণ প্রথম সানাদে মাজহুলে আইন রাবী আছে।আর মাজহুলে আইন হলে মুতাবে' যোগ্য হয় না গ্রহণযোগ্য মতানুসারে।আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সানাদে একই জায়গা তথা আবু হুরাইরাহ র. এর ছাত্র মাজহুল।তাই সম্ভাবনা আছে দু'জন একজনই।আর তা ইবনে আবী আসেমের সানাদ থেকে জানা গেল হয়তো তিনি কেনানাহ বিন নাবীহ। কেনানাহ বিন নাবীহ জঈফ।অতএব কেনানাহ বিন নাবীহ মাদারে সানাদ হওয়ার কারণে হাসান হতে পারবে না আবু হুরাইরাহর হাদীস।বরং জঈফই থাকবে।আল্লাহু আ'লাম।
.

গাযওয়ায়ে হিন্দু কখন হবে?

আমরা দেখলাম গাযওয়ায়ে হিন্দের ব্যাপারে সাওবানের হাদীস তথা প্রথম হাদীস সহীহ। বাকীগুলো জঈফ। প্রথম সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি কখন হবে: শেষ যুগে না মাহদীর যুগে না এর আগেই হয়ে গেছে?

ইবনে কাসীর, মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহহাব বুহায়রী ও সালেহ মুনাজ্জিদের মতে এ যুদ্ধ আগেই হয়ে গেছে মুহাম্মাদ বিন কাসেম বা ইবনে সুবক্তগীনের বিজয়ের মাধ্যমে।(ইসলাম কিউ এ ওয়েবসাইট, জবাব নাম্বার ১৪৮৫২৯)

অতএব ইমাম মাহদীর সময়ে বা শেষ যুগে গাযওয়ায়ে হিন্দুকে নির্দিষ্ট করা যুক্তিসংগত নয়।সর্বোচ্চ আমরা বলতে পারি গাযওয়ায়ে হিন্দ হয়ে গেছে আর না হলে হতে পারে।কিন্তু শেষ যুগের সাথে খাস করে "সামনে হবে" বলা ঠিক হবে না।আল্লাহু আ'লাম।
.

লিখক:
উস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ।
শিক্ষক,, মাদরাসাতুল হাদিস।
নাযিরাবাজার, ঢাকা।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.