ইসলামে আত্মঘাতি হামলা

আত্মঘাতি হামলা
বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ যেসকল ভয়াবহ ফিতনা গুলোর মোকাবেলা করছে, তার মধ্যে অন্যতম হল আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ! ইসলামের নাম দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কর্তৃক মুসলিম দেশগুলোতে ভয়াবহ রক্তপাতের যে স্রোতধারা অব্যহত রয়েছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কোরআন ও হাদিসের অপব্যখ্যা এবং সালাফদের মানহাজ থেকে বিচ্যুতি!
যাইহোক, আজকে আমরা তুলে ধরছি "আত্নঘাতি বোমা হামলা " সম্পর্কে বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফাক্বিহ আশ শাইখুল আল্লামাহ ড. সালিহ আল ফাউঝান হাফিজাহুল্লাহ-র গুরুত্বপূর্ণ ফাতওয়া!
● প্রশ্ন:
বিমান ছিনতাই করা, কোন ভবন উড়িয়ে দেওয়া, বিদ্রোহী কাজকর্ম এবং সরকার উৎখাতের চেষ্টা করা, এসব কাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? এগুলো কি ইসলামে বৈধ?
● উত্তর:
এগুলোর প্রত্যেকটি ঐ সমস্ত ঘৃণ্য কাজসমূহের অন্তর্গত যেগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ। এগুলো মুসলিমদের ক্ষতি করে এবং অমুসলিমরা এই ঘটনাগুলোকে ব্যাবহার করে মুসলিমদের উপর তাদের আক্রমণকে বৈধতা দেয়। ঠিক এই ঘটনাগুলোকে ব্যাবহার করেই অমুসলিমরা ইসলামের সমালোচনা করে এবং একে সন্ত্রাসবাদের ধর্ম বলে অপবাদ দেয়। এই ঘটনাগুলো ঘটে দেখেই তারা এমনটা করতে পারে। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন যে যদি মুসলিমরা অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তাহলে যেন তার একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে, এবং তাতে যেন সকল মুসলিম ও তাদের শাসকরা সমর্থন দেয়। বোমা হামলা, ধংসজজ্ঞ আর বিমান ছিনতাইের মত ঘটনাগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কেননা এগুলো মুসলিমদেরই সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে এবং এগুলো থেকে একটুও ফায়দা হাসিল হয়না।
রেফারেন্সঃ
মুয়ামালা আল-কুফফার ক্যাসেট।
● প্রশ্ন: বোমা হামলা বা আত্মঘাতী হামলা কি ইসলাম প্রচারের বৈধ উপায়গুলোর মধ্যে পরে?
উত্তর:যেসব লোক এই ধারণার বশবর্তী হয়ে এরকম কাজ করে যে তারা লোকদেরকে আল্লাহ্র কিতাব ও তার নবীর সুন্নাহর দিকে ডাকছে, বস্তুত তাদের নিজেদেরই ইসলামের দাওয়াত দরকার! এটা কিভাবে সম্ভব যে কেউ একজন একটি জাতির মাঝে ইসলাম প্রচার করবে আবার একইসাথে তাদের মধ্যে বোমার বিস্ফোরণ ও ধ্বংসলীলা ঘটাবে? এগুলো দাওয়াত নয়। বরঞ্চ এগুলো হল মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া।
আল্লাহ্র রাসুল ﷺ কি এইভাবে ইসলাম প্রচার করতেন? তিনি যখন মক্কায় ছিলেন, তখন এমনটা কি একবারও হয়েছে যে তিনি বা তার সাহাবীরা কোন ধরণের ধ্বংসাত্মক কাজ করেছেন? অবশ্যই না, বরং তিনি এসবের বিপরীতটাই করতেন। তিনি মানুষদেরকে তার রবের দিকে ডাকতেন জ্ঞান এবং সুন্দর দাওয়াতের দ্বারা। তিনি অনুরোধ করতেন যাতে লোকেরা তাকে এই কাজে সাহায্য করে। তিনি কোনদিনও সাধারণ মানুষদের মাঝে কোন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করেননি; কারণ এসব করে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কাফেরদেরও কেউ কেউ এতে উল্লাস করে। অতএব ইসলাম কখনোই এগুলোর অনুমতি দেয় না বা এগুলো সহ্যও করেনা। বরং এসব কাজ হচ্ছে শয়তানের দিকে দাওয়াত দেয়া এবং জাহান্নামের দিকে আহ্বান করা।
মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمّةً يَدْعُونَ إِلَى النّار
অর্থ: তাদেরকে আমি নেতা করেছিলাম; তারা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করতো
তিনি অন্যত্র বলেছেন:
يَدْعُونَ إِلَى النّارِ وَاللّهُ يَدْعُوَ إِلَى الْجَنّةِ
অর্থ: এরাই জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহ্ স্বীয় ইচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন।
সুতরাং এটা কি করে সম্ভব যে কারও দ্বীনের দিকে দাওয়াতের পদ্ধতি কার্যত জাহান্নামের দিকে দাওয়াত হবে?
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ دَعَا إِلَى ضَلالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ
آثَامِهِمْ شَيْئًا
অর্থ: যে-ই পথভ্রষ্টটার দিকে ডাকবে, তার জন্য তাকে যে অনুসরণ করল তার অপরাধের সমপরিমাণ গুনাহ লেখা হবে, অথচ সেই অনুসারীর গুনাহ থেকে কিছুই কমবে না।
রেফারেন্সঃ
মুসলিম থেকে বর্ণিত (হাদিস নং ২৬৭৪)
অতএব এটা অবশ্যই হওয়া সম্ভব যে এরকম একটি দাওয়াত আসলে জাহান্নামের দিকেই দাওয়াত এবং এটা সত্যের দিকে আহ্বান নয়।
[ফাতাওয়া আল-উলামা ফি আল-আহাদিস আল-রাহিনাহ আল্লাতি হাদাসাত বিসারক মাদিনাহ আর-রিয়াদ। (১৪২৪ হিজরাহ/ ২০০৪) ক্যাসেট থেকে সংগ্রহীত]
বইঃ ["আল ফাতাওয়া আশ শার'ইয়িয়্যাহ ফীল ক্বাদায়া আল 'আসরিয়্যাহ"]
► ইছলাহ্ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
No comments