যেসব দেশে রাত বা দিন ২৪ ঘন্টারও বেশি সময়ে প্রলম্বিত, সেসব দেশে কীভাবে সাওম পালন করতে হবে?

Related image

যেসব দেশে রাত বা দিন ২৪ ঘন্টারও বেশি সময়ে প্রলম্বিত, সেসব দেশে কীভাবে সাওম পালন করতে হবে?

বিবরণ: কিছু কিছু দেশে দিন বা রাত ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অব্যাহত থাকে। এমনকি কোনো কোনো দেশে ৬ মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়।প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কীভাবে সাওম পালন করবে? অনুরূপভাবে কোনো কোনো দেশে ২৪ ঘন্টায় রাত-দিন হয়, কিন্তু রাত-দিনের কোনো একটি ২০ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত লম্বা হয়। তাদের সাওম পালনের নিয়মইবা কী হবে?

পর্যালোচনা: এসব দেশে যে সময় হিসাব করে সালাতের সময় নির্ধারণ করতে হবে, সে বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।নাউওয়াস ইবন সাম‘আন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
«قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ يَوْمًا، يَوْمٌ كَسَنَةٍ، وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ، وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ، وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ» قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ، أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلَاةُ يَوْمٍ؟ قَالَ: «لَا، اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে সে কতদিন অবস্থান করবে? তিনি বললেন, ৪০ দিন। প্রথম দিন এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান। আর বাকী দিনগুলো তোমাদের দিনগুলোর মতোই। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সে দিনে আমাদের একদিনের সালাত কি যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, না। তোমরা ঐদিনের হিসাব করবে।”[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৩৭]

সময় হিসাব করে সালাত ও সাওমের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম একমত হলেও কীভাবে সময় নির্ধারণ করতে হবে, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে তিনটি মত পাওয়া যায়:
প্রথম মত: বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরামের মতে, ঐসব দেশের সবচেয়ে কাছাকাছি যেসব দেশে রাত-দিনের স্বাভাবিক আবর্তন ঘটে এবং শরী‘আত নির্ধারিত আলামত অনুযায়ী সালাত ও সাওমের সময় জানা যায়, সেসব দেশের হিসাব অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করতে হবে। ‘রাবেত্বাতুল আলামআল-ইসলামী’-এর প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী ফিকহ একাডেমী’ এই মতের পক্ষাবলম্বন করেছে। সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদও এজাতীয় মত প্রকাশ করেছে।

দ্বিতীয় মত: স্বাভাবিক হিসাব অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ রাতকে ১২ ঘন্টা এবং দিনকে ১২ ঘন্টা হিসাব করতে হবে। হাম্বলী মাযহাবের কোনো কোনো আলিম এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, যেহেতু ঐসব দেশে স্বাভাবিক সময় অনুযায়ী রাত-দিন হয় না, সেহেতু সেগুলোতে মধ্যমপন্থী কোনো এলাকার সময় অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করতে হবে। ঠিক ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর মতো, যার হায়েযের সময়ের নির্ধারিত কোনো সময়সীমা নেই এবং সে রক্ত দেখে হায়েয ও ইস্তেহাযার মধ্যে পার্থক্য করতে অক্ষম। (তাকে যেমন মধ্যম সময় অর্থাৎ সর্বোচ্চ সময় হায়েয হিসেবে ধরে বাকী সময় সালাত আদায় করতে হয় তেমনি এ ব্যক্তিরাও তাই করবে)। 

তৃতীয় মত: কতিপয় ফকীহের মতে, মক্কার সময় অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করতে হবে। কেননা মক্কা হচ্ছে ‘উম্মুল ক্বুরা’ বা জনপদসমূহের মা এবং মুসলিমদের কিবলা, সেখান থেকে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়েছে।

মাসআলাটির দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ যেসব দেশে রাত-দিন ২৪ ঘন্টায় হয়, কিন্তু রাত-দিনের কোনো একটি খুব বেশি সময় পর্যন্ত লম্বা হয়, সেসব দেশের সাওমের ধরণ নিয়ে ওলামায়ে কেরামের দুই রকম মত পাওয়া যায়:
প্রথম মত: দিন অত্যধিক লম্বা হোক বা অত্যধিক খাঁটো হোক ফজর উদয় হওয়া থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাওম পালন করা এসব দেশের বাসিন্দাদের ওপর ওয়াজিব। তবে দিন যদি অত্যধিক লম্বা হয় এবং কেউ অসুস্থতার কারণে সাওম পালনে অক্ষম হয়, বা তার অসুখ বেড়ে যায়, বা আরোগ্য লাভের গতি মন্থর হয়ে যায়, অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে বা অন্য কোনো কারণে সাওম পালনে অক্ষম হয়, তাহলে সে সাওম ছেড়ে দিবে এবং পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে।

‘রাবেত্বাতুল আলাম আল-ইসলামী’-এর প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী ফিকহ একাডেমী’ এবং সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদ এই মতের পক্ষাবলম্বনকরেছে। তারা বলেন, শরী‘আতের বিধান সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ﴾ [البقرة: ١٨٧] 
“আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সাওম পূর্ণ কর”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৭] 

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ. বলেন, ‘যদি সেখানে রাত ও দিন হয়ে থাকে, তাহলে লম্বা হোক বা খাঁটো হোক রাত ও দিন ধর্তব্য হবে। এমনকি যদি ধরে নেওয়া হয়, রাত ৪ ঘন্টা এবং দিন ২০ ঘন্টা, তবুও রাতকে রাত এবং দিনকে দিন ধরতে হবে। তবে যদি সেখানে রাত ও দিনের ব্যাপার না থাকে, তাহলে সময় হিসাব করতে হবে। যেমন, সুমেরু ও কুমেরুর অঞ্চলসমূহ।

দ্বিতীয় মত: দিন বা রাত যেহেতু অত্যধিক লম্বা, সেহেতু হিসাব করে সময় নির্ধারণ করতে হবে। তবে সময় নির্ধারণের পদ্ধতি কী হবে তদ্বিষয়ে তারা মতভেদ করেছেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, মক্কার সময় অনুযায়ী রাত-দিনের সময় নির্ধারণ করতে হবে। মিশরের আল-আযহারের ফাতওয়া বোর্ড এবং জর্ডানের ফাতওয়া বোর্ড এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।


আবার কেউ কেউ বলেছেন, তাদের সবচেয়ে কাছাকাছি যেসব দেশে রাত ও দিন স্বাভাবিক গতিতে আবর্তিত হয়, সেসব দেশের সময় অনুযায়ী তারা সময় নির্ধারণ করবে।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.