হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ খাওয়াও হারাম
হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ খাওয়াও হারাম
হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ খাওয়াও হারাম। হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ অনেক। সেগুলো হচ্ছে:
1. সূদ
মহান আল্লাহ বলেছেন:
﴿وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْۚ ﴾ [البقرة: ٢٧٥]
‘আল্লাহ বেচা-কেনা ও ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সূরা আল বাকারা: ২৭৫)
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُواْ ٱلرِّبَوٰٓاْ أَضۡعَٰفٗا مُّضَٰعَفَةٗۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٣٠ ﴾ [ال عمران: ١٣٠]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। (সূরা আলে ইমরান: ১৩০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ»
আল্লাহ সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও স্বাক্ষীগণের উপর লা‘নত বর্ষণ করেন।’’[ মুসলিম,খ ৫,পৃ. ৫০,হাদীস নং ৪১৭৭।]
যারা ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি কাজে সুদী কাজ-কারবার করে তাদের ঐ সকল আয় হারাম। সে আয় খেয়ে রোযা রাখলে, যাকাত দিলে কিংবা হজ্জসহ যাবতীয় নেক কাজ করলে আল্লাহ কবুল করবেন না।
2. ঘুষ
ঘুষের আয় হারাম। এই আয় দিয়ে খাদ্য কিনে খাওয়া, জীবিকা নির্বাহ করা ও পরিবার চালানো হারাম। স্বভাবতই এই অর্থ খরচ করে রোযা রাখলে, সেহরী ও ইফতার খেলে আল্লাহ তা কবুল করবেন না।
ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহণকারী দুইজনই জাহান্নামে যাবে। কেউ কেউ ঘুষকে বকশিশের সমতূল্য মনে করেন এবং ভাবেন যে, তা ঘুষ নয়, আসলে তা ঘুষ।’
3. অন্যায় পথে অর্থ আয় করা
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ وَلَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ ١٨٨ ﴾ [البقرة: ١٨٨]
‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের অর্থ আত্মসাৎ করো না।’ (সূরা আল বাকারা: ১৮৮)
অন্যায়ভাবে আয়ের বহু পদ্ধতি ও উপায় আছে। এর মধ্যে রয়েছে মিথ্যা বলা, ধোঁকা দেওয়া, চুরি-ডাকাতি করা, জাদু ও মন্ত্র করা, জুয়া, মদ ও হারাম জিনিসের ব্যবসায়ে আয়, ওজনে কম দেওয়া ইত্যাদি।
4. জুলুম
আল্লাহ জুলুম করে অর্থ আয় করতে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلۡيَتَٰمَىٰ ظُلۡمًا إِنَّمَا يَأۡكُلُونَ فِي بُطُونِهِمۡ نَارٗاۖ وَسَيَصۡلَوۡنَ سَعِيرٗا ١٠ ﴾ [النساء: ١٠]
‘যারা জুলুম সহকারে ইয়াতীমের মাল-সম্পদ খায়, তারা মূলতঃ পেটে আগুন প্রবেশ করায় এবং তারা শীঘ্রই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা নিসা: ১০)
সমাজের ধনী ও শক্তিশালী লোকেরা কিংবা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা অনেক সময় জবরদস্তি ও জুলুম করে অপরের অর্থ আত্মসাৎ করে।
হারাম আয়-রোজগার দিয়ে রোযাসহ যত ইবাদত করা হয় সেগুলোর কোনটাই যে আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদীস রয়েছে। তিনি বলেছেন:
«ثم ذكرَ الرجلَ يُطيل السَّفر ، أشعثَ أغْبَرَ ، يمدّ يديه إلى السماء : يا ربِّ يارب ومطْعمه حرام ، ومشْرَبُهُ حرام ، وملبَسَهُ حرام، وغُذِيَ بالحرام ، فأنَّى يُستجَاب لذلك ؟ »
‘তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক মুসাফিরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন যিনি বহু দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে এসেছেন এবং যার চুল ধুলা মলিন ও এলোকেশী, তিনি আকাশ পানে দুই হাত তুলে দো‘আ করেন এবং বলেন, হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের উপর ভিত্তি করেই তিনি গড়ে উঠেছেন, তার দো‘আ কিভাবে কবুল হবে?’[জামেউল উসূল,খ১০,পৃ.ও হাদীস নং.৮১৩১]
হাদীস দ্বারা বুঝা যায় লোকটি বড় ও বেশী ইবাদতকারী এবং বহু দূর-দূরান্ত থেকে পবিত্রস্থান সফরে এসেছেন দো‘আ ও ইবাদতের জন্য। কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? যার খাদ্য, পানীয় ও পোশাক হারাম আয়ের এবং যিনি হারাম খেয়েই নিজের শরীরের রক্ত-মাংস তৈরি করেছেন তার ইবাদত অবশ্যই আল্লাহ কবুল করবেন না। তাই এর রোযা ব্যর্থ।
তাই হালাল কামাই-রোজগার ও হালাল খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ، خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ، وَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ»
‘নিজ হাতের কামাই-রোজগারের চাইতে বান্দার উত্তম খাবার আর কিছু নেই। স্বয়ং আল্লাহর নবী দাউদ (আ) নিজ হাতের আয় থেকে খেয়েছেন।[মুসনাদে আহমাদ,খ.৪,পৃ.১৪১l
বিভিন্ন নবী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। নূহ (আ) কাঠমিস্ত্রি, মূসা (আ) রাখাল, দাউদ (আ) কামার, সোলাইমান (আ) রাজমিস্ত্রি, যাকারিয়া (আ) কাঠমিস্ত্রি এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাখাল ও ব্যবসায়ী ছিলেন।
ইসলাম একদিকে ব্যক্তি জীবনে যেমন হালাল আয়ের নির্দেশ দিয়েছে, তেমনি সামাজিক ও সামষ্টিক জীবনেও হালাল আয়-রোজগারের নিশ্চয়তা বিধান করেছে। ইসলাম সুদ, ঘুষ, জুয়া হারাম জিনিসের ব্যবসা-বাণিজ্য, চোরাকারবারী, মজুতদারী, ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল মেশানো, চুরি-ডাকাতি, জুলুম-নির্যাতন ও ছিনতাই-রাহাজানির মাধ্যমে অর্জিত আয়কে হারাম ঘোষণা করেছে। তাই একজন রোযাদারকে ব্যক্তিগত আয়-রোজগার হালাল করার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকেও ইসলাম সম্মত করার চেষ্টা করতে হবে। রাষ্ট্র থেকে সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া ও অন্যান্য আয়ের সকল উৎস বন্ধ করে দিতে হবে। তা না হলে সেগুলোর হারাম প্রভাবও ব্যক্তি জীবন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সুদের ভিত্তিতে পরিচালিত কাপড়ের কলের তৈরি কাপড় পরে আমরা নামাজ-রোযা ও দো‘আ করছি। সুদের ময়লাযুক্ত ঐ সকল কাপড় পরে ইবাদত কিংবা দো‘আ করলে কতটুকু কবুল হবে তা চিন্তার বিষয়। তাই প্রয়োজন হচ্ছে দেশে ইসলামী অর্থনীতি চালু করা, যার ফলে ব্যক্তিগত আয়কে হালাল করা অধিকতর সহজ হবে।
No comments