মাযহাবের তাকলীদ
কিছু ভাইয়ের দাবী হচ্ছে, "আমরা নির্দিষ্ট কোন ইমামের, যেমন—ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফিয়ী কিম্বা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল—এর তাকলীদ করি না। আমরা তাকলীদ করি নির্দিষ্ট মাযহাব। মাযহাব হচ্ছে, সেই মাহাবের অনেকজন মুজতাহিদের ইজতিহাদের সমন্বয়। যেমন, হানাফী মাযহাব হচ্ছে, ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম আবূ ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম যুফারপ্রমুখের সিদ্ধান্তের সমষ্টি।" অতএব আমরা নির্দিষ্ট কারো তাকলীদ অন্যকথায় 'তাকলীদে শাখসী' করি না।"
তারা যদি 'তাকলীদে শাখসী' না-করে, তবে তাকলীদে শাখসীর পক্ষে এতোশত বই লিখার কী প্রয়োজন ছিল? তাকলীদে শাখসীর বিপক্ষের লোকদেরকে 'ইসলাম ত্যাগ' ট্যাগ লাগানোর কারণ কী তবে?
আচ্ছা তাকলীদে শাখসী করেন না, খুব ভালো কথা। আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি তাকলীদে শাখসী না-করার জন্য। তবে তাকলীদে মাযহাব কারা করবে? কাদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য?
আমরা জানি মানুষ তিনশ্রেণির :
১. যারা মুজাহিদে মুতলাক বা স্বাধীন মুজতাহিদ। তাদের মধ্যে ইজতিহাদ-যোগ্যতা থাকার কারণে তাদের ব্যাপারে তাকলীদে শাখসী বা তাকলীদে মাযহাবের কোন প্রশ্নই আসে না। তারা তাকলীদ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
২. যারা গবেষক। তারা ইজতিহাদের ক্ষমতা ও যোগ্যতা রাখেন না; তবে মুজতাহিদ ইমামগণ যে-সব মত দিয়েছেন তাদের মতের কোনটা সঠিক এবং কোনটা সঠিক নয়—তা নির্ণয় করতে সক্ষম। এ শ্রেণির গবেষকের কাছে যে-মত সঠিক মনে হবে, তা তাকে মানতে হবে। এদের জন্য মাযহাবের তাকলীদ বৈধ নয়। কারণ, সকল মাস'আলায় একটি মাযহাব সঠিক নয়। কোন মাস'আলায় যদি অন্য মাযহাব সঠিক মনে হয়, তবে তাকে সঠিকটাই মানতে হবে। সঠিকটা না-মেনে মাযহাবের তাকলীদ করা হারাম।
৩. যারা জনসাধারণ। যাদের ইজতিহাদ কিম্বা সঠিক-ভুল যাচাইয়ের ক্ষমতা নেই। এ শ্রেণির ব্যাপারে আলিমগণের সিদ্ধান্ত হল, এদের কোন মাযহাব নেই।(১) যেমন, ইমাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রাহি. বলেন,
اعلم أن العامي الصرف ليس له مذهب، وإنما مذهبه فتوى المفتي.
জেনে রেখ! জনসাধারণের কোন মাযহাব নেই। তাদের মাযহাব মুফতীর ফাতাওয়া।২
এ শ্রেণির মাযহাব না-থাকলে কী করবে তারা? এ শ্রেণির কাজ হল, তারা তাদের সুযোগমত আশেপাশের যে-কোন আলিমকে জিজ্ঞাসা করে নিবে। এটাই ছিল চারশত হিজরী পর্যন্ত লোকদের পদ্ধতি। এ সম্পর্কে ইমাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী ও ইমাম ইযযুদ্দীন রাহি. বলেন, "চারশত হিজরীর পূর্ব পর্যন্ত নির্দিষ্ট মাযহাবের তাকলীদ ছিল না; বরং তারা তাদের সুযোগমত যেকোনো আলিম থেকে জেনে নিতেন। বিস্তারিত হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাতে দেখা যেতে পারে। অতএর এ শ্রেণি কোন মাযহাবের তাকলীদ করতে বাধ্য নয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়, মাযহাবের তাকলীদ কারো জন্য বৈধ নয়।
রেফারেন্সঃ
রেফারেন্সঃ
১. রাজরীদুত তাওহীদ, ৩৭৬; আল-মুফাসসাল ফী উলূমিল হাদীস, ২/১০; আল-ইনসাফ, ১০৭; আল-কাওলুস সাদীদ ফী বা'যি মাসায়িলিল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদ, ১১৯; হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ১/৩৩৪; ঈকদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদ, ৩০; আল-বাহরুর রায়িক, ২/৯০, ফাতাওয়া দারুল ইফতা আল-মিসরীয়া, ৭/১৭৩
২. ঈকদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদ, ৩০
No comments