প্রকৃত কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ অনুসরণই মুক্তির একমাত্র পথ
সারা পৃথিবীর সকল মুসলমানগণ আজ মাযহাবের মধ্যেই বহুভাগে বিভক্ত। অন্যান্য অনেক ভাগ উপভাগের মধ্যে রয়েছে মাধহাব (মাযহাব) বা ফিকহ্ স্কুল নিয়ে বিভক্তি। ইসলাম এর প্রধান চারটি মাধহাব বা স্কুল (মতবাদ) হচ্ছে -
১. হানাফিয়াহ
২. মালিকি
৩. শাফি’ই
৪. হাম্বলি
এছাড়াও স্থানভেদে আরও কিছু মাধহাব প্রচলিত আছে।
শুধু তাই নয় .. হানাফী মাযহাবে রয়েছে নানান বিভক্তি। যেমন :
১- কাদিয়ানী ( প্রতিষ্ঠাতা) মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ৷
২- মওদুদী/জামাতি ( প্রতিষ্ঠাতা) আবুল আলা মওদুদী।
৩- দেওবন্দী ( প্রতিষ্ঠাতা) কাসেম নানাতুবী ৷
৪- ইলিয়াসি তাবলীগ জামআত ( প্রতিষ্ঠাতা) মাওলানা ইলিয়াস ৷
৫- বেরলভী ( প্রতিষ্ঠাতা) আহমাদ রিজা খান বেরলভী।
এদের মধ্যে রয়েছে আরও বিভক্তি যা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো। শুধু তাই নয়, হানাফীরা তাদের মসজিদগুলোতে তাদের হানাফী নামের মসজিদ এর নাম দিয়ে রেখেছেন তা চিত্রে দেয়া হলো। অনেকেই বলে আহলে হাদীসরা তাদের মসজিদে আহলে হাদীস নাম দিয়ে বিভক্তি করেছেন কথাটা ঠিক নয়। আহলে হাদীস মসজিদে সকলে সালাত আদায় করতে পারবে কাউকে বাঁধা দেয়া হয় না কিন্তু হানাফী মসজিদগুলোতে বাঁধা দেয় হয় যা খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা।
আসুন ব্যক্তি বিশেষের অনুসরণ ছেড়ে কুরআন-সুন্নাহ আকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ হই।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন - তোমরা সকলে আল্লাহ্র রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা ইমরান : ১০৩)
ইসলাম এ বিভক্তি সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ :
সাধারন ভাবে যখন কোন মুসলিমকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কোন রীতি অনুসরণ করেন কিংবা তিনি কোন মতে বিশ্বাসী, তখন উত্তর হয়, হানাফি, মালিকি, শাফ’ই, হানবালি কিংবা শিয়া, সুন্নি, আহমাদিয়া, কাদিরিয়া ইত্যাদি।
আল্লাহ্ তা’আলা কুর’আনে বলেছেন, “যারা নিজেদের ধর্মকে বিভক্ত করে এবং নিজেরাই বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়, তাদের সাথে আপনার (মুহাম্মাদ) কোন সংশ্লিষ্টতা নাই। তাদের (বিচারের) ভার আল্লাহ্র হাতে। তারা কি করেছে না করেছে, (শেষ বিচারের দিনে) তিনি তাদের সব জানাবেন।“ [৬:১৫৯]
উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন যে, যারা ইসলাম ধর্মে বিভক্তি সৃষ্টি করে এবং দল উপদলে বিভক্ত করে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা উচিৎ।
চার ইমামের সবাই বলেছেন কুর’আন এবং হাদীস অনুসরণ করতে হবে :
চার প্রধান ইমাম এর প্রত্যেকেই বলেছেন যে, তাঁদের কোন ফাতওয়া কিংবা অনুশাসন এর সাথে যদি আল্লাহ্র বাণী অর্থাৎ কুর’আন এবং নবীজির কথা অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য হাদীথের সাথে না মিলে, তাহলে ঐ নির্দিষ্ট ফাতওয়াটি অগ্রাহ্য হবে এবং রসূলের সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে।
দেখুন -
১. ইক্বাধ আল-হিমাম, আল ফুলানী (ইমাম আবু হানিফা)
২. জামি বাইয়ান আল-ইলম্ (ইমাম মালিক)
৩. আন নাওয়ায়ির আল মাজমু’ (১/৬৩) (ইমাম শাফ’ই)
৪. ইক্বাধ আল-হিমাম (ইমাম হানবাল)
এ সংক্রান্ত দুটি উদাহরণ নিম্নে দেখুন :
১. ইমাম শাফ’ই বলেছিলেন যে, যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীকে স্পর্শ করে, যদি তার স্বামী উদু করা অবস্থায় থাকে তবে তার উদু ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু ইমাম শাফ’ই এর এই ফাতওয়া নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর একটি বিশুদ্ধ হাদীথের পরিপন্থী।
হাদীসটি হচ্ছে - আ’ইশাহ্ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন, “নবীজি সল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কোন এক স্ত্রীকে চুমু দিয়ে নামায পড়তে বের হন। তিনি (পরে আর) উদু করেন নি।“ [সুনান আবু দাউদ, ১:১৭৮]
ইমাম শাফ’ই এর এই ফাতওয়াটি নিঃসন্দেহে রসূলর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর হাদীসের পরিপন্থী। সুতরাং আমরা যদি এই ফাতওয়াটি প্রত্যাখান করি তাতে সমস্যা নাই, যেহেতু ইমাম শাফ’ই নিজেই বলেছেন, “আমি যদি কিছু বলি, তাহলে সেটা আল্লাহ্র গ্রন্থ এবং রসূলের সুন্নাহ এর সাথে মিলিয়ে দেখ। যদি মিলে যায় তবে গ্রহণ কর, যদি বিপক্ষে যায় তাহলে ছুঁড়ে ফেলে দাও।“ এটা আশ-শাফ’ই –এর বিবৃতি। দেখুন আন নাওয়াইর আল-মাজমু - পৃ : ১/৬৩।
২. হানাফি মাধহাব অনুসারে সকল প্রকার নামাযের পূর্বে নিয়্যত মুখে আরবীতে উচ্চারণ করতে হয়। আরবীতে না পারলে নিজের ভাষায় পড়ারও নির্দেশ আছে। কিন্তু কোন সহীহ হাদীথ গ্রন্থেই নামাযের পূর্বে মুখে আরবিতে কিংবা মাতৃভাষায় নিয়্যত উচ্চারণের কোন দৃষ্টান্ত নাই।
নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহু আকবার দিয়ে নামায শুরু করতেন।
আ’ইশাহ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন যে, “আল্লাহ্র রসূল তাকবীর (আল্লাহু আকবার; আল্লাহ্ মহান) দিয়ে নামায শুরু করতেন।” [মুসলিম ৪:১০০৫]
এ সংক্রান্ত আরও বহু হাদীস পাওয়া যায় যেখান থেকে এ কথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের শুরুতে কখনো নিয়্যত উচ্চারণ করতেন না। তিনি সর্বদা তাকবীর দিয়ে নামায শুরু করতেন। আল্লাহ্ তা’আলা সবচাইতে ভাল জানেন।
উপসংহার :
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারাংশে বলা যায় যে, অনুরূপভাবে প্রত্যেক মাধহাব এর যেসব অনুশাসন, ফাতওয়া, রীতিনীতির সাথে কুর’আন এবং সুন্নাহ এর মিল নাই সেগুলাও বর্জনীয়।
ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, প্রত্যেক ভিন্ন দল কিংবা অভিমত প্রদানকারী ফিকহ স্কুল –এর মানুষেরাই পরবর্তী পর্যায়ে নিজেরাই তাঁদের স্কুলের শিক্ষা অনুসরণ না করে (হতে পারে পরবর্তী মতটাই অধিকতর সঠিক কিংবা পুরাই বিদ’আহ) অন্যান্য উপদল তৈরি করেন। এই জন্য প্রত্যেক দলেই আপনি এক বা একাধিক উপদল পাবেন। কিন্তু আমরা যদি দল উপদল নির্বিশেষে কোন একটি দলে থাকতে চাই, সেটা হচ্ছে মুসলিম বা মুসলমানের দল, যেটা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে দিয়েছেন। একমাত্র কুর’আন এবং হাদীথ-ই শেষ দিন পর্যন্ত অবিকল থাকবে, এবং তা নকল বা বিকৃত হওয়ার কোন ভয় নাই, যেহেতু আল্লাহ্ তা’আলা নিজেই এর রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন!
মুসলিমের দল হচ্ছে সেটাই যাঁরা কুর’আন এবং হাদীসকে অনুসরণ করেন অর্থাৎ আহলে হাদীস। কেননা আহলে হাদীসরা কোন বিভক্তি করে না। এরা বিভক্তি করে শুধু হক ও বাতিলের ক্ষেত্রে। অনেকেই বলে থাকে আহলে হাদীসের অনেক দল রয়েছে তা ভুল। ওটা পরিচিতির জন্য। কিন্তু আকীদা ও মানহায সকলেরই এক। তাদের কোন আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই। আর এ কারনেই হক ও বাতিলে এরা কখনও আপোষ করে না। তাই কোন প্রচলিত মতামত, মাধহাব, দল কিংবা অন্য কোন রীতিনীতি যদি সেটা কুর’আন এবং সুন্নাহ পরিপন্থী হয় তবে সেটা প্রত্যাখ্যান করা বাঞ্ছনীয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাউকে যদি সঠিকটা জানিয়ে নতুন কিছু করতে বলা হয়, তারা এটা ভালোভাবে নিতে পারেনা। তারা তাদের যুক্তির পক্ষে কুর’আন কিংবা নির্ভরযোগ্য হাদীথের কোন উল্লেখ করতে না পারলেও তাদের পুরানো বিশ্বাসের প্রতিই অটল থাকে।
- সাজ্জাদ সালাদীন।
No comments