বিদআতি আমলকারীদের করুন পরিণতি
বিদআতি আমলকারীদের করুন পরিণতি |
ভূমিকাঃ
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি সেই কাজটি রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী হতে হবে সুন্নাহ তথা নবী (সাঃ)-এর নির্দেশনার বাইরে কোনো আমল গ্রহণযোগ্য নয়। নবী (সাঃ)-এর অনুসরন বাদ দিয়ে মনগড়াভাবে অথবা নিজস্ব খেয়াল-খুশি মতো 'ইবাদাতের সুযোগ ইসলামে নেই। ইসলামে 'ইবাদাত হচ্ছে 'তাওকিফি'। অর্থাৎ কোনো কিছুকে 'ইবাদাত হিসাবে সাব্যস্ত করতে হলে তার জন্য দলীল লাগবে। দলীল বিহীন কোনো কাজকে 'ইবাদাত বলার কোনো সুযোগ নেই।
বিদ'আতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
বিদ’আত আরবী শব্দ। অর্থ ও প্রয়োগের দিক হতে এটা সুন্নতের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। বিদ’আতের আভিধানিক অর্থ নতুন, নবোদ্ভাবিত, নতুন সৃষ্টি। বিদ’আতের পারিভাষিক অর্থ, সাওয়াবের আশায় দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো কর্ম বা ইবাদতের পন্থা আবিস্কার করা ও সেই অনুযায়ী আমল করা যার ভিত্তি বা দলীল ইসলামী শরীয়তের মধ্যে নেই। ইসলামী শরীয়তে বিদ’আতের কোনো স্থান নেই। বরংঃ
১) বিদ’আত প্রত্যাখ্যাত।
২) বিদ’আত নিকৃষ্ট কর্ম।
৩) বিদ’আত পথভ্রষ্টতা।
৪) বিদ’আতের কারনে আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।
৫) বিদ’আতিদের কোনো ইবাদত কবুল করা হবে না।
৬) বিদ’আত থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তার তাওবা কবুল করা হবে না।
৭) বিদ’আতের পরিনাম জাহান্নাম।
৮) বিদ’আতিদের উপর মহান আল্লাহ তায়ালার অভিসম্পাত। বিদ’আত সৃষ্টিকারী ও বিদ’আতিকে আশ্রয়দানকারীর উপর আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতা ও সমগ্র মানবজাতির লা’নত।
৯) কিয়ামতের মাঠে বিদা’আতিদেরকে ‘হাউযে কাউসারের’ পানি পান করতে দেয়া হবে না। তাদেরকে অপমানজনকভাবে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
১০) বিদ’আতে লিপ্ত হওয়ার কারনেই তাদেরকে ‘হাউযে কাউসার’ থেকে পানি পান করতে দেয়া হবে না।
১১) হাউযে কাউসার থেকে বিদ'আতিদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার সময় রাসুল (সাঃ) বলবেনঃ ‘দূর হও, দূর হও’।
১২) বিদ’আতের দিকে আহবানকারী শুধু নিজের নয় বরং অন্যের পাপের বোঝা সমুহ বহন করবে।
১৩) বিদা’আতের কারনে সুন্নতের বিলুপ্তি ঘটে।
সুতরাং আমল যতই আন্তরিক ও নিষ্ঠাপূর্ণ হোক না কেন, তথাপি এই আমল যদি নবী-রাসুলদের মানহাজ তথা তাদের অনুসৃত নীতি, পন্থা ও পদ্বতি বহির্ভূত হয়, অর্থাৎ সুন্নাহ সম্মত না হয় তাহলে এই আমল বিদ'আত এবং তা অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল। নিম্নে আমরা এ মর্মে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য উল্লেখ করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহঃ
বিদ’আত প্রত্যাখ্যাতঃ
দলীল নঃ ১
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে, যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’’ বুখারী ২৬৯৭; মুসলিম ৪৩৮৪-(১৭/১৭১৮), ৪৩৮৫-(১৮/...); আবু দাউদ ৪৬০৬; ইবন মাযাহ ১৪; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৪০; সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৪৯; রিয়াদুস সালিহীন ১৭৩
বিদ’আত নিকৃষ্ট কর্মঃ
দলীল নঃ ২
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’সবচেয়ে উত্তম নির্দেশ হল আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রদর্শিত পথ। দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজ। প্রতিটি বিদ’আতই ভ্রষ্টতা’’ মুসলিম ১৪৩৫(ক)-(৪৩/৮৬৭); ইবন মাযাহ ৪৫; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৪১; সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৫০; রিয়াদুস সালিহীন ১৭৪
দলীল নঃ ৩
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘’সর্বোত্তম বানী হল আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমুহ’’ বুখারী ৬০৯৮, ৭২৭৭
দলীল নঃ ৪
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’বস্তুত বিষয় দুটিঃ কালাম ও হিদায়াত। সর্বোত্তম কালাম (কথা) হল আল্লাহর কালাম এবং সর্বোত্তম হিদায়াত (পথনির্দেশ) হল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হিদায়াত। শোন! তোমরা নতুনভাবে উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। কেননা নিকৃষ্ট কাজ হল দ্বীনের মাঝে উদ্ভাবিত নতুন বিষয়। প্রতিটা (দ্বীনের মধ্যে) উদ্ভাবন হচ্ছে বিদ’আত এবং সকল বিদ’আতই ভ্রষ্টতা’’ ইবন মাযাহ ৪৬ (হাদীসটি শাওয়াহেদের ভিত্তিতে সহীহ)
বিদ’আত পথভ্রষ্টতাঃ
দলীল নঃ ৫
ইরবায ইবন সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সলাত আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আমাদের উদ্যেশ্যে এমন মর্মস্পর্শী নসীহত করলেন যাতে আমাদের চোখ গড়িয়ে পানি বইতে লাগলো। অন্তরে ভয় সৃষ্টি হল, মনে হচ্ছিল এটা বুঝি উপদেশ দানকারীর শেষ উপদেশ। এক ব্যক্তি আবেদন করলো, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদেরকে কিছু উপদেশ দিন।
রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ‘’আমি তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার, (ইমাম বা নেতার) আদেশ শোনার ও তার অনুগত থাকতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও সেই নেতা বা ইমাম হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে তোমাদের যে ব্যক্তি বেঁচে থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। এমতাবস্থা তোমাদের কর্তব্য হল, আমার সুন্নতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা এবং এই পথ ও পন্থার উপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকা।
সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন কথার (বিদ’আত) উদ্ভব ঘটানো হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা নতুন কথাই (দ্বীনের মধ্যে) বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আতই ভ্রষ্টতা’’ আবু দাউদ ৪৬০৭; তিরমিযি ২৬৭৬; ইবন মাযাহ ৪২; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৬৫; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ৩৭, ৫০; রিয়াদুস সালিহীন ১৬১ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
বিদ’আতের কারনে আমল বিনষ্ট হয়ে যাবেঃ
দলীল নঃ ৬
‘’বল- আমি তোমাদেরকে কি সংবাদ দেবো নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে কারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত? তারা হল সেই সব লোক দুনিয়ার জীবনে যাদের চেষ্টা সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেছে, আর তারা নিজেরা মনে করছে যে, তারা সঠিক পথেই আছে’’ কাহাফ ১৮/১০৩-১০৪
দলীল নঃ ৭
‘’কতক মুখ সেদিন নিচু হবে। আমল করে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে তারা জলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে’’ গাশিয়াহ ৮৮/২-৩
বিদ’আতিদের কোনো ইবাদত কবুল করা হবে নাঃ
দলীল নঃ ৮
ইবরাহিম তাইমী (রহঃ)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী ((রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি এর মধ্যে (অর্থাৎ মদীনায়) বিদা’আত উদ্ভাবন করে কিংবা বিদা’আতিকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তারা ফরজ নফল কোনো ইবাদত কবুল করেন না’’ বুখারী ১৮৭০, ৩১৭২, ৩১৭৯, ৬৭৫৫, ৭৩০০; মুসলিম ২৪৩৩(ক)-(৪৬৭/১৩৭০); তিরমিযি ২১২৭; মিশকাতুল মাসাবীহ ২৭২৮; রিয়াদুস সালিহীন ১৮১৩
বিদ’আত থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তার তাওবা কবুল করা হবে নাঃ
দলীল নঃ ৯
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আল্লাহ তায়ালা বিদ’আতকারী তওবায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখেন যতক্ষন সে বিদ’আত পরিত্যাগ না করে’’ সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৫৪; সাহীহাহ ১৬২০; মু’জামুল আওসাত ৪২০২ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
বিদ’আতের পরিনাম জাহান্নামঃ
দলীল নঃ ১০
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুৎবায় আল্লাহ তায়ালার যথাযোগ্য প্রশংসা করতেন এবং গুন বর্ণনা করতেন। অতঃপর বলতেনঃ ‘’আল্লাহ যাকে হিদায়াত করেন তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই, আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোনো হিদায়াতকারী নেই। সবচাইতে সত্য কথা আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম পথ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দেখানো পথ। নিকৃষ্ট কাজ বিদ’আত। কর্মের মধ্যে সকল নতুন আবিস্কার বিদ’আত আর সকল বিদ’আতের পরিণতি জাহান্নাম’’ নাসায়ী ১৫৭৮ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
বিদ’আতিদের উপর মহান আল্লাহ তায়ালার অভিসম্পাত। বিদ’আত সৃষ্টিকারী ও বিদ’আতিকে আশ্রয়দানকারীর উপর আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতা ও সমগ্র মানবজাতির লা’নতঃ
দলীল নঃ ১১
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’মদীনাহ হতে ওখান পর্যন্ত ‘হারাম’ রূপে গণ্য। সুতরাং তার গাছ কাটা যাবে না। এবং এখানে কোনো ধরনের অঘটন (শিরক, বিদ’আত, অত্যাচার ইত্যাদি) ঘটানো যাবে না। যদি কেউ এখানে কোনো অঘটন ঘটায় তাহলে তার প্রতি আল্লাহর এবং ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা’নত’’ বুখারী ১৮৬৭; ৭৩০৬; মুসলিম ২৪২৯-(৪৬৩/১৩৬৬)
দলীল নঃ ১১
ইবরাহিম তাইমী (রহঃ)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি এর মধ্যে (অর্থাৎ মদীনায়) বিদা’আত উদ্ভাবন করে কিংবা বিদা’আতিকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তারা ফরজ নফল কোনো ইবাদত কবুল করেন না’’ বুখারী ১৮৭০, ৩১৭২, ৩১৭৯, ৬৭৫৫, ৭৩০০; মুসলিম ২৪৩৩(ক)-(৪৬৭/১৩৭০); তিরমিযি ২১২৭; মিশকাতুল মাসাবীহ ২৭২৮; রিয়াদুস সালিহীন ১৮১৩
দলীল নঃ ১২
আবু তুফাইল আমির ইবন ওয়াসিলাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তাঁর নিকট এসে বলল, নবী (সাঃ) গোপনে আপনাকে কিছু বলেছেন কিনা? এ কথা শুনে আলী (রাঃ) রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী (সাঃ) লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে আমাকে চারটি বিশেষ শিক্ষণীয় কথা বলেছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! সে চারটি কথা কী? আলী (রাঃ) বললেন, যে লোক তার পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন। যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যবেহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন। ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোনো বিদ’আতিকে আশ্রয় দেয়। এবং যে লোক যমিনের সীমানার চিহ্নসমুহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন’’ মুসলিম ৫০১৮-(৪৩/১৯৭৮)
দলীল নঃ ১৩
আবু তুফাইল (রহঃ) হতে বর্ণিত। আলী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি বিদ’আতিকে আশ্রয় দেয় তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ’’ আদাবুল মুফরাদ ১৭ (সনদ সহীহ)
দলীল নঃ ১৪
কাইস ইবন আব্বাদ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। আলী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (আঃ) বলেছেনঃ ‘’কেউ বিদ’আত চালু করলে তার দায় তার উপর বর্তাবে। কোনো ব্যক্তি বিদ’আত চালু করলে বা বিদ’আতিকে মুক্তি দিলে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ’’ আবু দাউদ ৪৫৩০ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
কিয়ামতের মাঠে বিদা’আতিদেরকে ‘হাউযে কাউসারের’ পানি পান করতে দেয়া হবে না। তাদেরকে অপমানজনকভাবে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবেঃ
দলীল নঃ ১৫
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রান! আমি নিশ্চয়ই (কিয়ামতের দিন) আমার হাউয হতে কিছু লোকদেরকে এমনভাবে তাড়িয়ে দিব, যেমন অপরিচিত উটকে তাড়িয়ে দেয়া হয়’’ বুখারী ২৩৬৭; মুসলিম ৫৮৮৭-(৩৮/২৩০২)
দলীল নঃ ১৬
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কিয়ামত দিবসে মানুষকে খালি পায়ে, নগ্ন শরীরে ও খৎনাবিহীন অবস্থায় উঠানো হবে, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘যেদিন আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে আবার সৃষ্টি করবো। প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা আমার কর্তব্য, আমি তা অবশ্যই পালন করবো’ (আম্বিয়া ২১/১০৪)
ইবরাহীম (আঃ)-কে সর্বপ্রথম পোশাক পড়ানো হবে। আমার সাথীগনের মধ্যকার কিছু সংখ্যক লোককে বন্দী করে ডানে-বামে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে প্রভু! এরা তো আমার অনুসারী। আমাকে তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, আপনার পরে এরা কী সব বিদা’আতি কাজ করেছে। আপনি তাদের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর হতে তারা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে আরম্ভ করেছে।
তখন আমি আল্লাহ তায়ালার সৎকর্মপরায়ণ বান্দা [ঈসা (আঃ)-এর] মতো বলবো, ‘আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় (মায়িদাহ ৫/১১৮)’’ বুখারী ৩৩৪৯, ৪৬২৫, ৪৬২৬, ৬৫২৬; মুসলিম ৭০৯৩-(৫৭/২৮৬০), ৭০৯৩-(৫৮/...); তিরমিযি ২৪২৩, ৩১৬৭; রিয়াদুস সালিহীন ১৬৯
বিদ’আতে লিপ্ত হওয়ার কারনেই তাদেরকে ‘হাউযে কাউসার’ থেকে পানি পান করতে দেয়া হবে নাঃ
দলীল নঃ ১৭
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমি তোমাদের আগেই হাওযের কাছে গিয়ে হাজির হবো। আর ঐ সময় তোমাদের কতগুলো লোককে অবশ্যই আমার সামনে উঠানো হবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদেরকে আলাদা করে নেয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মত। তখন বলা হবে, আপনার পরে এরা কী নতুন কাজ করেছে তা আপনি জানেন না’’ বুখারী ৬৫৭৬
দলীল নঃ ১৮
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমার সামনে আমার উম্মতের কতক লোক হাউযের সামনে আসবে। তাদেরকে আমি চিনতে পারব। আমার সামনে থেকে তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবো, এরা আমার উম্মত। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি জানো না তোমার পরে এরা কী সব নতুন নতুন মত ও পথ বের করেছিল’’ বুখারী ৬৫৮২
দলীল নঃ ১৯
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমার উম্মত হতে একদল লোক কিয়ামতের দিন আমার সামনে (হাউযে কাউসারে) হাজির হবে। এরপর তাদেরকে হাউয থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে প্রভু! এরা তো আমার উম্মত। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কী সব নতুন বিষয় সৃষ্টি করেছে এব্যাপারে নিশ্চয়ই তোমার জানা নেই, নিশ্চয়ই এরা দ্বীন থেকে পিছনের দিকে ফিরে গিয়েছিল’’ বুখারী ৬৫৮৫
দলীল নঃ ২০
সা’ঈদ ইবন মুসাইয়াব (রহঃ) নবী (সাঃ)-এর সাহাবীদের থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমার উম্মতের কিছু লোক আমার সামনে হাউযে কাউসারে হাজির হবে। তারপর তাদেরকে সেখান থেকে আলাদা করে নেয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার উম্মত। তিনি বলবেন, তোমার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কী বিষয় সৃষ্টি করেছে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমার জানা নেই। নিঃসন্দেহে এরা দ্বীন থেকে পিছনে ফিরে গিয়েছিল’’ বুখারী ৬৫৮৬
দলীল নঃ ২১
আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’নিশ্চয়ই আমি হাউযের ধারে থাকবো। তোমাদের মধ্য হতে যারা আমার কাছে আসবে আমি তাদেরকে দেখতে পাবো। কিছু লোককে আমার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে প্রতিপালক! এরা আমার অন্তর্ভুক্ত, এরা আমার উম্মত। তখন বলা হবে, তুমি কি জানো তোমার পরে এরা কী সব আমল করেছে? আল্লাহর কসম! এরা দ্বীন থেকে সর্বদাই পিছনে ফিরে যেত।
বর্ণনাকারী ইবন আবু মুলাইকা বললেন, হে আল্লাহ! দ্বীন থেকে পিছনে ফেরা অথবা দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় পড়া থেকে আমরা তোমার কাছে পানাহ চাই’’ বুখারী ৬৫৯৩, ৭০৪৮; মুসলিম ৫৮৬৬-(.../২২৯৩)
দলীল নঃ ২২
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমি হাউযে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেইই হাজির থাকবো। তোমাদের কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তোমাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন কিছু লোককে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সাথী (উম্মত)। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না’’ বুখারী ৭০৪৯
দলীল নঃ ২৩
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে তাঁর সাহাবীগনের সামনে বলতে শুনেছিঃ ‘’আমি হাউযের নিকট তোমাদের মধ্য হতে যারা আমার নিকট আসবে তাদের প্রতীক্ষায় থাকবো। আল্লাহর কসম! আমার কাছ থেকে অবশ্যই কিছু ব্যক্তিকে আলাদা করে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমারই এবং আমার উম্মতেরই। আল্লাহ বলবেন, আপনি অবশ্যই জানেন না, তারা আপনার পরে কি আমল করেছে। তারা তো তাদের পিছনের দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছে’’ মুসলিম ৫৮৬৭-(২৮/২২৯৪)
দলীল নঃ ২৪
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমি হাউযের নিকট তোমাদের অগ্রগামী। আর আমি অবশ্যই কিছু দলের সম্বন্ধে বাক-বিতণ্ডা করবো এবং আমি অবশ্যই তাদের ব্যাপারে পরাজিত হয়ে যাব। তখন আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সহচর, আমার সঙ্গী। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না যে, তারা আপনার পরে কী নতুন বিষয়াদি আবিস্কার করেছে’’ মুসলিম ৫৮৭২-(৩২/২২৯৭)
দলীল নঃ ২৫
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’নিশ্চয়ই হাউযের পাশে এমন কতিপয় লোক আসবে যারা পৃথিবীতে আমার সাহচর্য পেয়েছিল। এমন কি তখন আমি তাদেরকে দেখতে পাবো এবং তাদেরকে আমার সামনে নিয়ে আসা হবে। তখন আমার কাছে আসতে তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। অতঃপর আমি বলবো, হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী, এরা আমার সঙ্গী। তখন আমাকে বলা হবে, নিশ্চয়ই আপনি জানে না, আপনার পরে এরা কিভাবে দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবন করেছে’’ মুসলিম ৫৮৯০-(৪০/২৩০৪)
দলীল নঃ ২৬
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরাফাতের ময়দানে (বিদায় হজ্জের দিন) তাঁর কানকাটা উস্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় বলেনঃ ‘’তোমরা কি জানো আজ কোন দিন, এটা কোন মাস এবং এটা কোন শহর? তারা বলেন, এটা (মক্কা) সম্মানিত শহর, সম্মানিত মাস ও সম্মানিত দিন।
তিনি আরও বলেন, সাবধান! তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের রক্ত, তোমাদের পরস্পরের প্রতি তেমনই হারাম যেমনি তোমাদের এই মাসের সম্মান রয়েছে, তোমাদের এই শহরে তোমাদের এই দিনে।
শুনে রাখো! আমি তোমাদের আগেই হাউযে কাউসারে উপস্থিত থাকব। অন্যান্য উম্মতের তুলনায় আমি তোমাদের সংখাধিক্য নিয়ে গৌরব করবো। তোমরা যেন আমার চেহারা কালিমালিপ্ত না করো। সাবধান! কিছু লোককে আমি মুক্ত করতে পারব, আর কিছু লোককে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে আল্লাহ! এরা তো আমার সাথী। তিনি বলবেন, তোমার পরে এরা কী বিদা’আত করেছে তা তুমি জানো না’’ ইবন মাযাহ ৩০৫৭ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
হাউযে কাউসার থেকে বিদ'আতিদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার সময় রাসুল (সাঃ) বলবেনঃ ‘দূর হও, দূর হও’
দলীল নঃ ২৭
সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমি তোমাদের আগে হাউযের নিকট পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার (হাউযের) সামনে উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে।
আবু সাঈদ খুদরী বর্ণনা করেন, তখন নবী (সাঃ) বলবেনঃ ‘এরা তো আমারই অনুসারী।‘ তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয়ই জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কী পরিবর্তন করেছে। তখন নবী (সাঃ) বলবেনঃ তারা দূর হোক, দূর হোক’’ বুখারী ৬৫৮৩, ৬৫৮৪, ৭০৫০, ৭০৫২; মুসলিম ৫৮৬২-(২৬/২২৯০), ৫৮৬৩-(.../২২৯১)
দলীল নঃ ২৮
উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমি তোমাদের জন্য হাউযের নিকট অগ্রগামী হবো। তাই সাবধান! আমার নিকট তোমাদের এমন কেউ যেন না আসে, যাকে আমার নিকট হতে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়, যেমন হারানো উটকে ভাগিয়ে দেয়া হয়। আর আমি বলতে থাকবো, কেন তাদেরকে তাড়ানো হচ্ছে? তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, তারা আপনার পরে কী নতুন বিষয়ের আবিস্কার করেছে? তখন আমি বলবো, দূর হও! মুসলিম ৫৮৬৮-(২৯/২২৯৫)
দলীল নঃ ২৯
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) কবরস্থানে এসে কবরবাসীদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ঈমানদার কবরবাসীরা! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহ চাহে তো অচিরেই আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো। অতঃপর তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমাদের আকাঙ্ক্ষা এই যে, আমরা আমাদের ভাইদেরকে দেখতে পাবো।
সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন, তোমরা আমার সাহাবী। আর যারা আমাদের পরে আসবে, তারা আমার ভাই।
আমি তোমাদের আগেই হাউযের নিকট উপস্থিত হবো। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এমন লোকদেরকে কিভাবে চিনবেন, যারা এখনও জন্মলাভ করেনি? রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমরা কি দেখো না, যদি কোনো ব্যক্তির একটি সাদা পা ও সাদা চিহ্নযুক্ত ঘোড়া অপর ব্যক্তির কালো ঘোড়ার সাথে মিশে যায়, তবে কি সে তার ঘোড়াটি চিনতে পারবে না? তাঁরা বলেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে। রাসুল (সাঃ) বললেন, তাঁরা কিয়ামতের দিন অযুর বদৌলতে সাদা হাত-পা ও সাদা চিহ্ন বিশিষ্ট অবস্থায় আসবে।
আমি তোমাদের আগেই হাউযে কাউসারে উপস্থিত হবো। একদল লোক আমার হাউয থেকে বিতাড়িত হবে, যেমন পথভোলা উট বিতাড়িত হয়। আমি তাদেরকে ডেকে বলবো, তোমরা এদিকে এসো, তোমরা এদিকে এসো। তখন বলা হবে, এসব লোক আপনার পরে দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে এবং তারা পশ্চাতে ফিরে গেছে। তখন আমি বলবো, দূর হও, দূর হও’’ ইবন মাযাহ ৪৩০৬ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
বিদ’আতের দিকে আহবানকারী শুধু নিজের নয় বরং অন্যের পাপের বোঝা সমুহ বহন করবেঃ
দলীল নঃ ৩০
‘’তারা অবশ্যই তাদের নিজেদের পাপের বোঝা বহন করবে, নিজেদের বোঝার সাথে আরও বোঝা। আর তারা যেসব মিথ্যা উদ্ভাবন করতো সে সম্পর্কে কিয়ামতে তারা অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে’’ আনকাবুত ২৯/১৩
দলীল নঃ ৩১
‘’কিয়ামত দিবসে তারা বহন করবে নিজেদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায়, আর তাদেরও পাপের বোঝা যাদেরকে তারা গুমরাহ করেছে নিজেদের অজ্ঞতার কারনে। হায়! তারা যা বহন করে তা কতই না নিকৃষ্ট’’ নাহল ১৬/২৫
দলীল নঃ ৩২
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি সৎ কাজের দিকে আহবান করবে, সে তার অনুসারীর সমান সাওয়াব পাবে, অথচ অনুসরনকারীর সাওয়াব কমানো হবে না।
অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীদের সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না’’ তিরমিযি ২৬৭৪; ইবন মাযাহ ২০৬; আবু দাউদ ৪৬০৯; রিয়াদুস সালিহীন ১৭৯; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৮ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল নঃ ৩৩
আবু আমর জারীর ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো একটি উত্তম কথা বা কাজের প্রচলন করবে, সে তার নিজের এবং ঐ সমস্ত লোকেরা সাওয়াব পাবে, যারা তার উপর আমল করবে। অথচ তাদের সাওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।
আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ রীতির প্রচলন করবে, তার উপর তার নিজের এবং ঐ সকল লোকদের গুনাহ বর্তাবে যারা তার উপর আমল করবে। তাদের গুনাহের কিছু পরিমানও কম করা হবে না’’ মুসলিম ১৬৯১-(৬৯/১০১৭); তিরমিযি ২৬৭৫; ইবন মাযাহ ২০৩; রিয়াদুস সালিহীন ১৭৬; সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৬১; মিশকাতুল মাসাবীহ ২১০
দলীল নঃ ৩৪
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে জনৈক ব্যক্তি সাহায্য চাইলে তার জাতির লোকেরা তাকে দান করা হতে বিরত থাকলো। অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে কিছু দান করলো। তখন কওমের লোকেরাও দান করলো। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘’যে ব্যক্তি একটি ভালো কাজ চালু করলো, অতঃপর তার অনুসরন করা হল, সে তার প্রতিদান পেল এবং যে তার অনুসরন করলো তার অনুরূপও প্রতিদান লাভ করলো। অথচ তাদের প্রতিদান থেকে কোনো কিছু কম করা হবে না।
আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ চালু করলো, অতঃপর তার অনুসরন করা হল, সে তার পাপ ভোগ করবে এবং যারা তার অনুসরন করলো তাদেরও পাপের ভাগীদার হল। অথচ তাদের কারো পাপ কোনো অংশে হ্রাস করা হবে না’’ সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৬২ (আলবানি হাসান সহীহ বলেছেন)
দলীল নঃ ৩৫
ওয়াসেলা বিন আসক্বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি (ইসলামী শরীয়তে) উত্তম রীতি চালু করবে, যে পর্যন্ত সে অনুযায়ী আমল হবে তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরেও সে অনুযায়ী সে তার প্রতিদান পেতে থাকবে, যে পর্যন্ত কাজটি পরিত্যাক্ত না হয়। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজন চালু করবে, সে তা পরিত্যাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পাপের ভাগীদার হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি মুসলিম দেশের সীমানা পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে কিয়ামত পর্যন্ত পাহারা দেয়ার প্রতিদান পেতে থাকবে’’ সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৬৫ (আলবানি হাসান সহীহ বলেছেন)
দলীল নঃ ৩৬
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সাহায্যের জন্য নবী (সাঃ)-এর কাছে এলে তিনি তাকে সাহায্য করার জন্য লোকদেরকে উৎসাহিত করলেন। এক ব্যক্তি বলল, আমার পক্ষ থেকে এই এই পরিমাণ। রাবী বলে, উক্ত মজলিসে এমন কেউ অবশিষ্ট রইল না, যে কমবেশি কিছু ঐ ব্যক্তিকে দান করেনি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ কোনো ব্যক্তি কোনো উত্তম পন্থার প্রচলন করলে এবং তদনুযায়ী কাজ করা হলে সে তার পূর্ণ প্রতিদান পাবে এবং যারা সেই পন্থা অনুসরন করে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও ঐ ব্যক্তি পাবে।
পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি কোনো মন্দ পন্থার প্রচলন করলে এবং তদনুযায়ী কাজ করা হলে পূর্ণ পাপের বোঝা তার উপর বর্তাবে এবং যারা উক্ত পন্থার অনুসরন করবে তাদের সমপরিমাণ পাপও ঐ ব্যক্তির উপর বর্তাবে, এতে তাদের কারো পাপের বোঝা মোটেও হালকা করা হবে না’’ ইবন মাযাহ ২০৪ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল নঃ ৩৭
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কোনো ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করলে, তার অনুসারীদের সমান পাপ তার উপর বর্তাবে এবং তাতে তার অনুসরনকারীদের পাপের বোঝা মোটেও হালকা করা হবে না। আবার যে কোনো ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহবান করলে, সে তার অনুসরনকারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং তাতে তাদের সাওয়াব মোটেই হ্রাস করা হবে না’’ ইবন মাযাহ ২০৫; (আলবানি সহীহ লিগাইরিহী বলেছেন)
দলীল নঃ ৩৮
আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে কোনো ব্যক্তি কোনো ভালো প্রথার প্রচলন করলে এবং তার পরে তদনুসারে কাজ করলে তার জন্য এ কাজের পুরস্কার রয়েছে, অধিকন্তু তার অনুসরনকারীদের সমপরিমাণ পুরস্কারও রয়েছে। অবশ্য তাতে তাদের পুরস্কারের কোনো ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে, কোনো ব্যক্তি কোনো মন্দ প্রথার প্রচন করলে এবং তার পরে তদনুযায়ী কাজ করা হলে, তার জন্য এ কাজের বিনিময়ে গুনাহ রয়েছে। এবং যারা তদনুসারে কাজ করবে তাদের গুনাহের সমপরিমাণ তার উপর বর্তাবে, এতে তাদের গুনাহের পরিমাণ কিছুই কমবে না’’ ইবন মাযাহ ২০৭ (আলবানি হাসান সহীহ বলেছেন)
দলীল নঃ ৩৯
আমর বিন আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি আমার একটি (মৃত) সুন্নত জীবিত করলো এবং লোকেরা তদনুযায়ী আমল করলো, সেও আমলকারীদের সমপরিমাণ পুরস্কার পাবে এবং তাতে আমলকারীদের পুরস্কার আদৌ হ্রাস পাবে না। পক্ষনাতরে কোনো ব্যক্তি বিদ’আতের প্রচলন করলে এবং তদনুযায়ী আমল করা হলে, তার উপর আমলকারীদের সমপরিমাণ পাপ বর্তাবে এবং তাতে আমলকারীদের পাপের বোঝা আদৌ হালকা হবে না’’ ইবন মাযাহ ২০৯ (আলবানি সহীহ লিগাইরিহী বলেছেন)
বিদা’আতের কারনে সুন্নতের বিলুপ্তি ঘটেঃ
দলীল নঃ ৪০
হাসসান ইবন আতিয়াহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোনো জাতি যখনই দ্বীনের মধ্যে কোনো বিদা’আত সৃষ্টি করে, তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদের থেকে সে পরিমান সুন্নত উঠিয়ে দেন। কিয়ামত পর্যন্ত এ সুন্নত আর তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না’’ দারেমী ৯৮; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৮৮ (সনদ সহীহ)
দলীল নঃ ৪১
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কোনো জাতি কোনো বিদ’আত উদ্ভাবন করলে, অনুরূপ একটা সুন্নাত সেখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। অতেব বিদ’আত উদ্ভাবন না করে দুন্নাত আঁকড়ে ধরাই উত্তম’’ ফাতহুল বারী ১৩/২৬৭ পৃষ্ঠা; জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম ২/১২৭ পৃষ্ঠা; মা’আরিজুল কুবুল ৩/১২৩৩ পৃষ্ঠা (সনদ জাইয়েদ) (গৃহীত, শিরক-বিদ’আতের অভয়ারণ্য বাংলাদেশ- কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী পৃষ্ঠা নঃ ৩১)
দলীল নঃ ৪২
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা যখনই কোনো বিদ’আতের উদ্ভাবন করেছে, তখনই তারা এক একটি সুন্নাতকে মেরে ফেলেছে। এভাবে বিদ’আর জাগ্রত ও প্রচণ্ড হয়ে পড়েছে। আর সুন্নাত মিটে গেছে’’ তাবারানী, মু’জামুল কাবীর; মাজমাউয যাওয়াইদ; (হায়সামী রাবীদের নির্ভরযোগ্য বলেছেন) (গৃহীত, শিরক-বিদ’আতের অভয়ারণ্য বাংলাদেশ- কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী পৃষ্ঠা নঃ ৩১)
শেষ কথাঃ একটি পরিপূর্ণ পানি ভর্তি গ্লাসে যদি পুনরায় পানি ঢালা হয় তাহলে যেমন অতিরিক্ত পানি গ্লাস থেকে পড়ে যায়, ঠিক তেমনি পরিপূর্ণ ‘’দ্বীনে’’ অতিরিক্ত কিছু প্রবেশ করাতে চাইলে সেটাও পড়ে যাবে। মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ ‘’আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন (জীবন ব্যাবস্থা) হিসাবে মনোনীত করলাম’’ মায়িদাহ ৫/৩
আবু বারযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘’আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে ইসলাম দ্বারা ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন'' বুখারী ৭১১২, ৭২৭১
ইসলামি শরীয়তের বিধানে মনগড়া মতামত ব্যক্ত করার অধিকার কারো নেই, এমনকি স্বয়ং নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এরও ওয়াহী ছাড়া মনগড়া কোন কিছু বলার অধিকার ছিল না।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
‘’আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সেই অনুসারে বিচার-ফয়সালা কর’’ মায়িদাহ ৫/৪৯
মহান আল্লাহ্ তায়ালা আরও বলেনঃ ‘’নবী যদি কোন কথা নিজে রচনা করে আমার নামে চালিয়ে দিত, আমি অবশই তার ডান হাত ধরে তাকে পাকড়াও করতাম, তারপর অবশ্যই কেটে দিতাম তার হৃৎপিণ্ডের শিরা; অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে (আমার শাস্তি থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য) বাধা সৃষ্টি করতে পারে’’ হাক্ককাহ ৬৯/৪৪-৪৭
অথচ আজ আমরা রাসুল (সাঃ)-এর আনীত দ্বীন পালন করছি কেউ মাযহাবের দোহাই দিয়ে আবার কেউ নিজেদের তরিকার দোহাই দিয়ে! হায় আফসোস! আল্লাহ্ আমাদের হিদায়াত দান করুন ও বিদ'আত পরিহার করে সুন্নাহ সম্মত ইবাদত পালন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
No comments