ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহঃ) ব্যাপারে কিছু কথা

Image may contain: 1 person, beard and text

ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহঃ) ব্যাপারে কিছু কথা
আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য
যিনি বলেছেন “ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্য।”
📚[সূরাহ জাছিয়াহ: ৭]
তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর (খাঁটি বান্দা) সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব।”
📚[সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২]
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি যিনি বলেছেন,
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَّارٍ.
যাকে তার অবগত বিদ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞস করা হ’ল কিন্তু সে তা গোপন করল, ক্বিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে’।
📚[আবুদাউদ, মিশকাত হা/২২৩ সনদ ছহীহ, বাংলা মিশকাত ২য় খন্ড, হা/২১৪]
.
🔸প্রারম্ভিকা,
আহলুস সুন্নাহর উলামা- মাশায়েখ ,দ্বায়ীগণের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ এবং বাতিলপন্থী কর্তৃক
বিভিন্ন মিথ্যাচার, তোহমত লাগানোর বিষয়টি এক্কেবারে নতুন নয় বরং তা বেশ পুরনো! এতদসত্ত্বেও হক্ব ও বাত্বিলের লড়াই যুগ যুগ ধরে চলমান রয়েছে!
হক্বপন্থী উলামায়ে ক্বেরামের মানহানী করে, তাঁদের নামে মিথ্যাচার করে জীবনের অধিকাংশ সময়গুলো ব্যয় করা "বাত্বিল পূজারী,উলামায়ে ছু"দের অপচেষ্টা
রুখতে ও তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে সুন্নাহর অনুসারীগণ সর্বদা তৎপর ছিলেন!
সকলের জ্ঞাতার্থে সুস্পষ্টভাবে একথা জানিয়ে দিতে চাই যে,আমরা যেকোন ভ্রান্ত ফ্বিরকা,দল, মতবাদ বা ব্যক্তির বিরোধিতা করি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের জন্যে! এক্ষেত্রে কারো সাথে আমাদের ব্যক্তিগত দ্বন্ধ নেই বললেই চলে! আমরা যখন কোন বিরোধী মতবাদের বা দ্বায়ীর সমালোচনা করি অথবা উলামায়ে'ছু দের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে কলম ধরি, তখন সেটা নিজের মনের খায়েশ মেটানোর জন্যে নয় বরং সুন্নাহ নির্দেশিত পথেই এর প্রতিবিধান করি। বিদায়াতী, চরমপন্থী খারেজী, ইখুয়ানী কিংবা ভ্রান্ত মানহাজি এমনকি যারা তাদের একনিষ্ঠ ভক্ত এসকল লোকদের বিরুদ্ধেও আমরা সুন্নাহ মেনেই মুখ, হাত বা কলম চালাই। এটা অস্বাভাবিক নয় যে, আমাদের ও আমাদের উলামাদের প্রতি যে মাত্রার যুলম, তোহমত, মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা হয়ে আসছে, তার সমুচিত জবাব স্বরুপ আমরা ই’ত্বিদাল রক্ষায় একটু এদিক - সেদিক করতেই পারি। তবুও আমরা চেষ্টা করি আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখেই সংযত জবানে ও পরিশিলিত মেজাজে তাদের সেসকল মিথ্যাচারের দালিলিক জবাব দিতে! [ আল্লাহ তাওফ্বিক দাতা]
 উস্তাযুল আলেম, ইমাম আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ বলেন -
“হক্কপন্থী লোকেরা যদি কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, সেই কথা বর্ণনা না করতো, তাহলে ভ্রষ্টতার শিকার হয়েছে এমন লোকেরা তাদের ভুলের উপরেই থেকে যেত। তখন সাধারণ লোকেরা অন্ধভাবে সেই ভ্রষ্টতার অনুসরণ করতো। সুতরাং যারা সত্য জেনেও চুপ করে ছিলো, লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার পাপ তাদের উপরেও পড়তো।”
📚 [মাজমু ফাতাওয়াঃ ৩/৭২]
.
🔸পর - সমাচার,
উপমহাদেশের মাশহুর আলেমেদ্বীন শাইখ মোস্তফা যাহির আমানপুরী হাফিজাহুল্লাহ-র একটি দিকনির্দেশনা দিয়েই শুরু করছি! শাইখ [হাফিয্বাহুল্লাহ] বলেছেন , "সর্ব প্রথম আমাদের কর্তব্য হল, আহলুস সুন্নাহর উলামা- মাশায়েখ,দ্বায়ীদের গায়ে বাতিলপন্থীরা যেসকল মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে রেখেছে, আগে সেগুলোকে দালিলিকভাবে খন্ডন করা, যাতে আওয়ামের (জন সাধারণের) মাঝে আলেমদের দ্বীনদ্বারিত্ব,আমানতদ্বারিতার ব্যাপারে সন্দেহ,সংশয় দূর হয়ে যায়"! একথা সত্য যে, সর্বকালে , সর্ব যুগেই একদল লোক হক্বপন্থী উলামায়ে কেরামের বদনাম ও ছিদ্রান্বেষণে লিপ্ত ছিল এবং তা আজ অব্দি চলমান রয়েছে!
.
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা,
আজ খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে কিছু কথা বলার জন্য আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি! বেশ কিছুদিন যাবত আমরা লক্ষ্য করছি -চারদিকে নাম সর্বত্র কিছু "মু"তাদিল" লোকজন কর্তৃক আহলে হাদীছ, সালাফী মাসলাক-কে দুর্বল প্রমাণে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক! এক্ষেত্রে ওইসকল ভাইয়েরা এদেশীয় স্বনামধন্য হানাফী আলেমেদ্বীন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ-কে নিজেদের "আইডল" হিসেবে উপস্থাপন করছে!
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল, কিছুক্ষেত্রে শাইখ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ-র সুস্পষ্ট পদস্খলন ঘটেছে অথবা তিনি ই'ত্বিদাল রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন বলেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে!
.
আমাদের সকলের একথা জেনে রাখা জরুরী যে, ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন আক্বীদাহ'র ক্ষেত্রে একজন আপোষহীন আলেমেদ্বীন! উনার প্রজ্ঞা, মেধা, দ্বীনের খেদমত নিয়ে আপত্তি তোলার মত দুঃসাহস বা যোগ্যতা কোনটিই আমার নেই! আমি শুধুমাত্র শাইখ [রাহিমাহুল্লাহ] কর্তৃক সালাফীদের উপর যেসকল অপবাদের কালিমা লেপন করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গে সামান্য কিছু আলোচনা করব! [ইনশা আল্লাহ]
.
আমাদের স্যার রাহিমাহুল্লাহ-র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে
বর্তমান সময়ে কিছু উদীয়মান বক্তার বক্তব্য, লিখনীতে বেশ শৈথিল্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে! আম জনতা ইলমের ঘাটতির কারণে সেই শৈথিল্যতাকে আবার "মধ্যমপন্থা" বলে আখ্যায়িত করে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন! মুলত ইক্বতিসাদ বা মধ্যপন্থা হলো -
তাওয়াসসুত (মাঝখানে অবস্থান নেয়া) ই’তিদাল (উদারতা), রুশদ (প্রত্যক্ষতা) এবং ইসতিক্বামাহ (দৃঢ় প্রক্ষ্যতা)। দ্বীনের মধ্যে মু’তাদিল হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আদেশসমূহ মেনে চলে এবং এটা থেকে তাফরীত বা ইফরাতের দিকে (বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি) বিচ্যুত হয় না।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ
“তারা মধ্যপন্থা (ইক্বতিসাদ) অবলম্বনকারীদের অন্তর্গত, কিন্তু তাদের অনেকেই মন্দ কাজে লিপ্ত।”
[সূরা আল মা’য়িদাহঃ ৬৬]
.
🔸এবার মুল বিষয়ে আসা যাক,
কিছুদিন আগে আমাদের প্রিয় স্যার ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ’র একজন ছাত্র লিখেছে, “এদেশের অধিকাংশ আলেমরা যেখানে একে-অপরের বিরুদ্ধে ফাতাওয়াবাজিতে লিপ্ত সেখানে তিনি (স্যার রাহি:) খ্রিস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন পরিশ্রম করেছেন। এবং উম্মতের ঐক্যের জন্যও চেষ্টা করেছেন!”
লেখক আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেমদের এই বলে সমালোচনা করেছেন যে, “তারা শুধু একে-অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্ত।”
.
এমন অনেক লোকই বর্তমানে রয়েছে, যারা ‘জারাহ ও তা’দীলের’ ইলমকে পছন্দ করেনা, শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং গোমরাহীতে লিপ্ত বক্তাদের বিরুদ্ধে মুসলিমদেরকে সতর্ক করার মানহাযে বিশ্বাসী নয়। অবশ্য তাদের এই অবস্থানের পক্ষে তারা বিভিন্ন যুক্তি বা কারণ দেখিয়ে থাকে, তবে মূলত এর প্রধান কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। ফেইসবুক, ইন্টারনেটে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা সালাফী মানহায সম্পর্কে জানেনা, বা জানলেও তার বিরোধীতা করে। অনেক সালাফী / আহলে হাদীছ ভাইয়েরা তাদের লিখনী নিয়মিত পড়ে, লাইক-শেয়ার করে অথচ তারা তা ধরতে পারেনা যে, তারা যাদের লেখা পড়ছে মূলত তারা সালাফী মানহাযের বিরোধীতাকারী। এভাবে এক সময় আস্তে আস্তে ওইসকল লেখকের প্রতি আকৃস্ট হয়ে নিজেরাও সালাফী মানহাযের সাথে শত্রুতা পোষণকারী হয়ে যায়, যা তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনা।
যাইহোক, আমি উপরে স্যার [রাহিমাহুল্লাহ]-র ছাত্রের যেই বক্তব্য তুলে ধরলাম, চলুন দেখি এই বক্তব্য কতটুকু সঠিক আর কতটুকু ভুল !!!
.
🔸এক,
আমাদের স্যার [রাহিমাহুল্লাহ]-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল - শাইখ “আমি তাবলীগ জামআতের সাথে তিন দিনের চিল্লায় যাওয়ার জন্য মানত করেছিলাম। এখন আমাকে এই মানত পূরণ করতে হবে কিনা।”
উত্তরে স্যার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, “জায়েজ কোন কাজ মানত করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়!
সুতরাং আপনি তিন দিনের চিল্লার মানত পূরণ করুন।”
সোর্সঃ
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর এটি!
► লিংকঃ https://youtu.be/Tc26JP2XVls
.
আমরা সকলেই স্যার [রাহিমাহুল্লাহ]-র বক্তব্যের প্রথম অংশকে সঠিক মনে করি! কারন - “জায়েজ যেকোন কাজের মানত করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়" এক্ষেত্রে কারো কোন আপত্তি নেই! কিন্তু পরের অংশে “আপনি তিন দিনের চিল্লার মানত পূরণ করুন” - এটা ভুল এবং আপত্তিকর! কারণ হারাম যেকোন কাজের মানত করলে সেই মানত পূরণ করা যাবেনা এটাই আহলুল ইলমদের অভিমত!
.
■ তাবলীগ জামআতের সাথে চিল্লা দেওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফাক্বিহ আশ শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম সালিহ আল-ফাউযান হাফিয্বাহুল্লাহ বলেন -
"এটা জায়েজ নয়, কারণ এটা একটা বিদআ’ত। এভাবে বেড়িয়ে যাওয়া ৪০ দিন, ৪ দিন, ৪ মাস এটা হচ্ছে বিদ'আত। এটা প্রমানিত যে, তাবলীগ জামাআ’ত হচ্ছে ভারতীয় দেওবন্দীদের মধ্য থেকে একটা “সূফী” জামাত। তারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় তাদের “সূফীবাদ” প্রচার করার জন্য। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী ব্যক্তি, তাওহীদের অনুসারী কোন ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, তাবলিগ জামাতের সাথে তাবলীগে বের হবে। কারণ সে যদি তাবলীগীদের সাথে যায়, তাহলে সে তাদেরকে বিদআ’ত প্রচার করতে সাহায্য করলো। এবং লোকেরা তাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করবে। “অমুক (আলেম বা শিক্ষিত লোক) তাদের সাথে তাবলীগে যায়”, অথবা এটা বলবে “সাধারণ মানুষ সবাই আমাদের সাথে যায়” অথবা তারা বলবে “আরে তাবলিগ জামাত এইদেশে (সৌদি আরবে) বৈধ।”.
এইজন্য তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব, তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব এবং তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাবেনা (তাদের কথা শোনা যাবেনা)।
এটা এজন্য যে, তাদের কথা না শুনলে বা তাদেরকে কোনভাবে সাহায্য - সহযোগিতা না করলে তারা তাদের বিদআ’ত তাদের দেশে নিয়ে ফিরে যাবে, আমাদের আরব দেশগুলোর মাঝে ছড়াতে পারবেনা। এছাড়া তাদের সাথে গিয়ে তাদেরকে শিক্ষা দেওয়াও জায়েজ নয়। এটা ভুল, কারণ তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে চায়না। তারা জ্ঞান অর্জন করতে চায়না কারণ তারা ধোকাবাজ লোক, তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। তারা এসেছে তোমাদেরকে (সূফীবাদ ও ইলিয়াসি ত্বরীকা) শিক্ষা দেওয়ার জন্য, তারা এজন্য আসেনি যে তোমাদের কাছ থেকে কিছু শিখবে। তারা এসেছে তোমাদেরকে তাদের “সূফীবাদ” ও তাদের “মাযহাব” শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তারা তোমাদের কাছে শিখতে আসেনাই, তারা যদি শিখতে আসতো তাহলে তারা আরব দেশের উলামাদের সাথে মসজিদে বসতো এবং তাদের কাছ থেকে কিতাব অধ্যায়ন করতো। এসব ভুলের মধ্য থেকে এর দ্বারা ধোকায় পড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। [নাআ’ম]
► ফাতওয়ার লিংকঃ
https://www.youtube.com/watch?v=RsDXXtYsK_U
[ বিঃদ্রঃ ইমাম ইবনু বায, ইমাম আলবানী, ইমাম মুকবিল বিন হাদি আল ওয়াদি'ঈ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে-শাইখ, শায়খ হামুদ আত-তুওইজিরি রাহিমাহুমুল্লাহ সহ পূর্ববর্তী ও বর্তমান কিবার উলামাগন এই জামআত-কে কঠোরভাবে রাদ্দ করেছেন যা প্রবন্ধ সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশের কারণে উল্লেখ করলাম না! ]
.
দেখা যাচ্ছে, উপরের প্রশ্নের উত্তরে স্যার রাহিমাহুল্লাহ শিথিলতা দেখাতে গিয়ে স্পষ্ট ভাষায় 'তাবলীগ জামআতকে পথভ্রষ্ট একটি ফিরক্বা ও তাদের সাথে চিল্লাতে যাওয়া যাবেনা' না বলে বরং তিনি তাদের কিছুটা সমর্থন করেছেন এবং তাদের সাথে চিল্লাতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন অথচ তা বিদায়াত!
মুলত উনার এমন কিছু লিবারেল অবস্থানের কারণে অনেকেই এই বলে প্রশংসা করে বলেন যে “আমাদের দেশের অধিকাংশ আলিমরা যেখানে একে-অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়া-ছুড়ি করে, সেখানে স্যার রাহিমাহুল্লাহ এমন করেন নি”!
.
বিদআতী দল এবং ব্যক্তিদের ব্যাপারে এমন নরমপন্থার নীতিকে অনেকেই তাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে এবং এর বিপরীতে সালাফী মানহাযের সমালোচনায় একথা চারদিকে বলে বেড়াচ্ছে যে, "সালাফীরা বাড়াবাড়ি করে অথবা তারা মধ্যমপন্থী নয়!!!
.
🔸দুই,
একদা এক মাহফিলে স্যার রাহিমাহুল্লাহ-কে এক লোক প্রশ্ন করেছিল যে, কিছু কিছু ভাইয়েরা হানাফী ইমামদের কাফির বলে (! )আবার ঐ ইমামদের পিছনে সালাতও পড়ে তাদের ব্যাপারে হুকুম কি?
.
[একটু খেয়াল করুন প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের মধ্যেই কিন্তু খণ্ডন রয়েছে! যদি হানাফী ইমামকে "কাফির"ই বলবেন তাহলে ওই কাফিরের পিছনে আবার সালাত কেন আদায় করবেন? এটা ছিল মুলত প্রশ্নকর্তার চালাকী! কিন্তু স্যার রাহিমাহুল্লাহ- র অবিবেচনাপ্রসূত উত্তরটা শুনে আমি একদম থমকে গেলাম!]
তিনি উত্তরে বলেন, "আহলে হাদীছদের অনেক কাজ-ই ভাল, তারা সহীহ হাদীছ মানার চেষ্টা করেন (যদিও প্রশ্নকর্তা "আহলে হাদীছ " নামটা মেনশন করেননি) কিন্তু ফিক্বহী মাসআলাসমূহকে এরা 'দ্বীন' বানিয়ে ফেলেছে! তারা বলে "রাফউল ইয়াদাইন" না করলে সালাত হবেনা আবার যারা মাযহাব মানে তাদেরকে "কাফির" বলা সবচেয়ে ভয়ংকরতম কাজ! (ইন্নালিল্লাহ)
.
প্রথমত,
আমি এমন কোন মুল ধারার সালাফী আলেমকে চিনি না যারা বলে "রাফউল ইয়াদাইন" না করলে ছালাত হবেনা বরং আল্লামা বিন বায রাহিমাহুল্লাহ তো স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, কেউ যদি হাত ছেড়ে দিয়েও ছালাত আদায় করে তাতেও তার সালাত হয়ে যাবে! একই ভাবে সাব-কন্টিনেন্টেও বহু সালাফী আলেমের মতামত হল এই সুন্নাতগুলো ছেড়ে দিলেও ছালাত হয়ে যাবে তবে ছাওয়াবের তারতম্য হবে! অর্থাৎ যত সুন্নাত ছাড়বেন ততই ছাওয়াব কমতে থাকবে!
তাছাড়া স্যার [রাহিমাহুল্লাহ-র] পূর্ববতী একাধিক আলোচনা থেকেও বুঝা যায় যে, রাফউল ইয়াদাঈন সুন্নাহ' দ্বারা সাব্যস্ত তাহলে তা না করার উসূল কি ঐ মাযহাবী গোঁড়ামী নয় ?
.
দ্বিতীয়ত,
যারা মাযহাব ফলো করে আহলে হাদীছরা তাদের "কাফির" বলে এটা এই প্রথম শুনলাম! গণহারে সমস্ত মাযহাবীদের তাকফীর করা তো আহলে হাদীছদের মানহাযের খেলাফ! কোন ব্যক্তি,দল অথবা নির্দিষ্ট জামআত'কে "তাকফীর করার ক্ষেত্রে আহলে হাদীছরাই সবচেয়ে বেশি সর্তকতা অবলম্বন করে অথচ এই "তোহমত" কিভাবে উল্টো তাদের গায়েই লেপন করে দিলেন তা আমার বোধগম্য হল না! (আল্লাহতাআলা শাইখ'কে ক্ষমা করুন)
আমি একজন সালাফী আলিমকেও চিনি না, যিনি সমস্ত মাযহাবীদেরকে (অন্তত প্রসিদ্ধ চার মাযহাব) "কাফির" ফাতওয়া দিয়েছে! মুলত এমন সব বক্তব্যের কারণে মানুষের অন্তরে সালাফীদের প্রতি ঘৃণা - বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়! এটা ইনসাফপূর্ন বক্তব্য নয় বরং ইনসাফ করতে গিয়ে তীরে এসে তরী ডুবানো!
► উক্ত প্রশ্নোত্তরের লিংকঃ https://youtu.be/yc9AfxSCF_U
.
এছাড়াও আরেকটি পাব্লিক লেকচারে (৪/৫ বছর আগে শুনেছিলাম) হানাফী ও আহলে হাদীছদের বাড়াবাড়ি নিয়ে বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে শাইখ (রাহঃ) বলেছেন- "আহলে হাদীছরাও বুকে হাত না বাঁধলে, জোরে আমিন না বললে কাফির বলে" যা খুবই দুঃখজনক! (ইন্নানিল্লাহ)!
মজার বিষয় হচ্ছে -এই সুন্নাতগুলো ছেড়ে দিলে কি কেউ ঈমানহারা হয়? এছাড়া এগুলোর উপর ডিফেন্ড করেও তো তাকফীর সাব্যস্ত হয় না এটা একজন সাধারণ ত্বলিবুল ইলমও জানে!
মুলত সালাফীদের উপর এসব অপবাদ নতুন নয় বরং এর আগেও আল-কায়েদা প্রমোটার চরমপন্থী জসিম উদ্দিন রাহমানী [হাদ্বাহুল্লাহ] এমন মিথ্যা অপবাদ লাগিয়েছিল এবং তখনি তার কঠোর জবাব দিয়েছিলেন উস্তায আব্দুল্লাহ আল কাফী এবং
উস্তায মতিউর রাহমান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ!
►লিংকঃ https://youtu.be/LVcRdQ5OYwk
.
🔸নোটঃ
1️⃣ “আলেমরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করে” এই কথা যারা বলে এদের ব্যাপারে সাবধান হোন। একজন আলিম আরেকজন আলিমের ভুল ধরেন, এটা খুব স্বাভাবিক এবং এর অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টিকে “কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করার” মতো নীচু মানের ভাষা দ্বারা বর্ণনা করা আপত্তিকর, এবং তা একজন ব্যক্তির ইলমহীনতার পরিচায়ক। এভাবে এরা মূলত (পরোক্ষভাবে) আলিমদেরকেই তুচ্ছ করে।
2️⃣ ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর [রাহিমাহুল্লাহ-র ] ভুল ধরা, তার ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করা ইত্যাদি এই লেখার উদ্দেশ্য নয় বরং আমি বলবো বাংলাভাষী প্রত্যেক ত্বলিবুল ইলমের একবার হলেও উনার লিখিত বইগুলো পড়া উচিত । স্যার রাহিমাহুল্লাহ-র কিছু গুণ ছিলো যা সত্যিই প্রশংসনীয়, এবং আমাদের সবার জন্য অনুকরণীয়। আমরা দুআ করি আল্লাহ তায়ালা তাঁর সমস্ত দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। জেনে রাখা জরুরী উনার কিছু বিষয়ে মারাত্মক পদস্খলন ঘটেছে , যার কয়েকটা উদাহরণ উপরে দেওয়া হলো। তবে আমাদের চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তাঁর ভুল-ত্রুটিগুলোকে কিছু মানুষ আদর্শ বলে মনে করে, সেইগুলোকে তাদের মানহায হিসেবে গ্রহণ করছে। আমরা এমন অজ্ঞতা এবং অন্ধভাবে কোন ব্যক্তির অনুসরণের বিরোধী।
3️⃣ মধুর বোতলে বিষ মিশিয়ে সালাফীদের উপর কেউ কোন অভিযোগ তুললে অনেকেই সেটা কোমরবেঁধে প্রচার- প্রসারে লেগে যান অথচ একটু যাচাই করার চিন্তাও করেন না! যা একেবারেই গর্হিত কাজ!
.
নিশ্চয় আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। উপরিউক্ত আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা!
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা- আমাদের সবাইকে যাবতীয় ফিতনা থেকে হিফাযত করূন, আমাদের অন্তরসমুহকে শয়তানের জিম্মায় ছেড়ে না দিয়ে বরং
ব্যক্তির উপর হক্ব'কে (সত্য) প্রাধান্য দেওয়ার শক্তি ও ঈমান দান করুন, সর্বপরি, আহলুস সুল্লাহ-র উলামায়ে ক্বেরামের ইত্তেবাহ এবং তাদের উপর বিদ্বেষপন্থীদের আরোপিত ভিবিন্ন মিথ্যা অভিযোগ খন্ডনের তাওফ্বীক দান করূন।
[আ - মীন ]
                                                          সুন্নাহর পথযাত্রী

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.