সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা


সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা!

কোরআনের আলোকে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ  ﷺ-এর  প্রিয় সহচর সাহাবায়ে কেরামকে যে মযার্দার আসনে আসীন করেছেন,পৃথিবীর ইতিহাসে তা চিরকাল সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। বহু আয়াত ও হাদীস  দ্বারা তাঁদের মযার্দা প্রকাশ পায়!

লেখাটি বড় হয়ে যাবে  তাই নিম্নে কতিপয় আয়াত উপস্থাপন করছিঃ

✍ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,

ﻟَﺎ ﻳَﺴْﺘَﻮِﻱ ﻣِﻨﻜُﻢ ﻣَّﻦْ ﺃَﻧﻔَﻖَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞِ ﺍﻟْﻔَﺘْﺢِ ﻭَﻗَﺎﺗَﻞَ
ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﺃَﻋْﻈَﻢُ ﺩَﺭَﺟَﺔً ﻣِّﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧﻔَﻘُﻮﺍ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪُ
ﻭَﻗَﺎﺗَﻠُﻮﺍ ﻭَﻛُﻠًّﺎ ﻭَﻋَﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤُﺴْﻨَﻰ
অর্থাৎ,তোমাদের মধ্যে সমান নয় ঐসব লোক যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় ও জিহাদ করেছে, তারা মর্যাদায় ঐসব লোক অপেক্ষা বড়, যারা মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় ও জিহাদ করেছে এবং তাদের সবার সাথে আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন!
 [সূরা হাদীদঃ আয়াত ১০]

✍ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা অন্যত্র বলেন,
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗِﻴﻞَ ﻟَﻬُﻢْ ﺁﻣِﻨُﻮﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺁﻣَﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺃَﻧُﺆْﻣِﻦُ
ﻛَﻤَﺎ ﺁﻣَﻦَ ﺍﻟﺴُّﻔَﻬَﺎﺀُ ۗ ﺃَﻟَﺎ ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻫُﻢُ ﺍﻟﺴُّﻔَﻬَﺎﺀُ ﻭَﻟَٰﻜِﻦْ ﻟَﺎ
ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
অর্থাৎ, যখন তাদেরকে বলা হয়, ঈমান আন,যেমন অপরাপর লোকেরা ঈমান এনেছে’, তখন তারা বলে আমরা কি নির্বোধদের মত ঈমান আনব? শুনছো ! তারাই হলো নির্বোধ, কিন্তু তারা জানেনা ।
 [সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৩]

এ আয়াতে এটাই বলা হয়েছে যে, যার ঈমান সাহাবায়ে কেরামের ঈমানের মত নয়, সে মুনাফিক এবং বড় বোকা! উপরিউক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন সাহাবী  কাফির হতেই  পারেন না,  তাছাড়া আল্লাহতালা এখানে  নির্দেশ দিচ্ছেন সাহাবীদের মত ইমান আনায়নের জন্য এবং সকল সাহাবীর জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের ওয়াদা করেছেন । এটাও প্রমাণিত হল যে, নেক্কার বান্দাদের মন্দ বলা কিংবা তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখা  মুনাফিকদের কুপ্রথা!
যেমনঃ রাফেযী (শিয়া) সম্প্রদায় সাহাবায়ে কেরামকে
খারেজীগণ ‘আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ রাখে।

হাদীসের আলোকে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদাঃ

সাহাবায়েভকেরামের ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস  বর্ণিত আছে । তন্মধ্যে কয়েকটি এখানে উদ্ধৃত হল,

✍ রাসুলুল্লাহ  ﷺ- বলেন,

ﻋﻦ ﺍﺑﯽ ﺳﻌﯿﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﯼ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻋﻨﮧ
ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻻ
ﺗﺴﺒﻮﺍ ﺍﺻﺤﺎﺑﯽ ﻓﻠﻮ ﺍﻥّ ﺍﺣﺪﮐﻢ ﺍﻧﻔﻖ ﻣﺜﻞ ﺍﺣﺪ
ﺫﮬﺒﺎ ﻣﺎ ﺑﻠﻎ ﻣﺪّ ﺍﺣﺪﮬﻢ ﻭﻻ ﻧﺼﻔﮧ -
 “আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলনা । তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও খয়রাত করে,তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদ্কা করার সমানও হতে পারেনা;বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা ।”
[বুখারীঃ১ম খন্ড-৫১৮ পৃষ্ঠা,তিরমিযীঃ২য় খন্ড-২২৫ পৃষ্ঠা]

✍ রাসুলুল্লাহ  ﷺ-  অন্যত্র বলেন,

ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﮧ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﻐﻔﻞ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮧ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﯽ ﺍﺻﺤﺎﺑﯽ ﻻ
ﺗﺘﺨﺬﻭ ﺍﻧﺘﻢ ﻋﺮﺿﺎ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﯼ ﻓﻤﻦ ﺍﺣﺒﮭﻢ ﻓﺒﺤﺒﯽ
ﺍﺣﺒﮭﻢ ﻭﻣﻦ ﺍﺑﻐﻀﮭﻢ ﻓﺒﺒﻐﻀﯽ ﺍﺑﻐﻀﮭﻢ –

‘আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাঁদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাঁদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাঁদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’
[তিরমিযী : ৪২৩৬; সহীহ ইবন হিব্বান-৭২৫৬]

✍ রাসুলুল্লাহ  ﷺ-  আরও বলেন,

ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻋﻨﮧ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠّﻢ ﺍﺫﺍ ﺭﺍﯾﺘﻢ
ﺍﻟﺬﯾﻦ ﯾﺴﺒّﻮﻥ ﺍﺻﺤﺎﺑﯽ ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻟﻌﻨۃ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯽ
ﺷﺮّﮐﻢ -

"যখন তোমরা এ ধরনের লোক দেখবে, যারা আমার সাহাবীকে মন্দ বলে, তখন তাদের উদ্দেশে বলে দাও, তোমাদের অনিষ্টের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক”।
[তিরমিযী ২য় খন্ড-২২৫ পৃঃ]

সাহাবীদেরকে সম্মান করতে হবে,তাদের সমালোচনা করা যাবে না!

 ✍ রাসুলুল্লাহ  ﷺ- বলেন,
"তোমরা আমার সাহাবীদের সম্মান করবে (কারণ তারাই তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ); তাদের পর পরবর্তী যুগের মানুষদের (তাবেঈ), এবং এরপর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষদের (তাবে- তাবেঈন)।। আর এরপর মিথ্যা প্রকাশিত হবে।।"
[সুনান নাসাঈ- ৫/৩৮৭।।
শরহে মা'আনিল আসার ত্বাহাবী- ৪/১৫০।।
মুসনাদ এ হুমাইদী- ৩৭ পৃষ্ঠা।]
হাদিসটির সনদ সহিহ।

উল্লেখ্যঃ সাহাবীদেরকে মুহাব্বত করা ঈমানের অংশ।তাদের সাথে বিদ্বেষ রাখা বা তাদের সমালোচনা করা হারাম এবং তা ঈমানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সাহাবায়ে কেরাম সম্বন্ধে আমাদের যেই আকীদা বা বিশ্বাস থাকতে হবেঃ

⦁ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম আদিল অর্থাৎ, নির্ভরযোগ্য, সত্যবাদী, মুত্তাকী, পরহেযগার,ন্যায়পরায়ণ এবং ইসলাম ও উম্মতের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের উর্ধে স্থান দানকারী। প্রত্যেক সাহাবীর মধ্যে হেদায়েতের নূর বা আলো রয়েছে, কারও মধ্যে অন্ধকার নেই!

⦁ সমস্ত ছাহাবী সমালোচনার উর্ধে! তাদের সমালোচনা করা,দোষ-ত্রুটি বের করা সম্পূর্ন হারাম,অমার্জনীয় অপরাধ! সাহাবীদের সমালোচনাকারী ফাসেক, ফাজের ও গোমরাহ।

⦁ ছাহাবীদের প্রতি মুহাব্বত ও ভক্তি শ্রদ্ধা,
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম শিয়ার বা প্রতীকী বৈশিষ্ট্য!

⦁ যদি কখনো সাহাবীদের মধ্যে দ্বিমত বা বাহ্যিক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে এমনটা দেখা যায় তাহলে সেসব ক্ষেত্রেও উভয় সাহাবীকেই  হক্ব হিসেবে জানতে হবে এবং এটা শুধুই ইজতিহাদি ভুল মনে করতে হবে।

⦁ তাদের মধ্যে পারস্পরিক যুদ্ধ সংঘর্ষের ক্ষেত্রে, বাক বিতণ্ডা ইত্যাদিকেও সমান নজরে দেখতে হবে!
যেহেতু তারাও মানুষ  এবং মানুষ হিসেবে ইজতেহাদী ভুল-ত্রুটি  থাকতে পারে তাই এসকল বিষয়াদিতে একপক্ষের দিকে শক্ত অবস্থান করে অন্য পক্ষের সমালোচনা করা বৈধ নয়! কেননা, ইজতিহাদ ভুল হলেও তারা সাওয়াব পাবেন। আমাদের এই আক্বিদা (বিশ্বাস) রাখতে হবে যে, তাদের  প্রত্যেকেরই নিয়ত বিশুদ্ধ ছিল! ব্যক্তি স্বার্থ কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশে তারা সেটা করেননি. বরং দ্বীনের খাতিরে এবং ইখলাসের সাথেই করেছেন!

⦁ ছাহাবীদের মর্যাদা দুনিয়ার সমস্ত ওলী আউলিয়াদের উর্ধে! যিনি উম্মতের সবচেয়ে বড় ওলী (কিন্তু সাহাবী নন) তার মর্যাদাও একজন নিম্নস্তরের সাহাবীর সমান হতে পারে না!

⦁ ছাহাবায়ে কেরাম যখন কোন বিষয়ের উপর একমত পোষণ করেন,তখন ঐ মাসআলা মানা উম্মতের জন্য অত্যাবশ্যক! এটাকে ইজমায়ে সাহাবা বলা হয়!

⦁ ছাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ  ﷺ- এর সরাসরি ছাত্র, তারা ওহী নাযিল হওয়ার সময় ছিলেন, তারা রাসুলুল্লাহ  ﷺ- এর মোজেযা সংঘটিত হতে দেখেছেন.।এবং তাদের ঈমানকে চরমভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে!
সুতরাং তাদের সম্পর্কে কোন রকম দৃস্টতা দেখানো ইমানের পরিপন্থী কাজ!

মুহাদ্দিসগন যখন কোন হাদীসের রাবী(হাদীস বর্ননাকারী) তার নাম-পরিচয় আমল-আখলাক যাচাই-বাছাই করতেন কিন্তু সাহাবায়ে কেরামদের নাম আসলে তখন তারা এখানে চুপ থাকতেন,কোন কথা বলতেন না। কারন,এখানে কথা বললেই বেয়াদবী হয়ে যাবে।

✍ রাসুলুল্লাহ  ﷺ- বলেন,
আমার উম্মত ৭৩ ভাগে ভাগ হয়ে যাবে! এর মধ্যে একটা মাত্র দল নাজাতপ্রাপ্ত! বাকী ৭২ টা গোমরাহ জাহান্নামী! সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন,,
ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা:) জান্নাতী কারা?
রাসুল (সা:) তখন বললেন,, আমি যেই আদর্শের উপর আছি এবং আমার সাহাবীরা যেই আদর্শের উপর আছে.!

রাসুলুল্লাহ (সা:) এর আদর্শের উপর তো  কারও কোন কথা বা আপত্তি নাই। কিন্তু হাদীসের দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ সাহাবীদের আদর্শও মানতে হবে! এখান থেকেই হক্ব আর বাতিল নির্ণীত হবে! যারা সাহাবীদের আদর্শ, তাদের আমল, তাদের মাসআলা, তাদের ফতোয়া, তাদের সিদ্ধান্তকে মানতে রাজি হবে না,নি:সন্দেহে তারা গোমরাহ, পথভ্রষ্ট!

উল্লেখ্য যে, শরহে মুসলিমে আছে যে, সাহাবীদের গালি দেয়া,সমালোচনা করা হারাম এবং বড়ই নির্লজ্জের ব্যাপার। জমহুরের মতে সাহবীদের সমালোচনাকারী চরম শাস্তির যোগ্য। কতিপয় মালিকি মাজহাবের আলেমগন মতে, সে সম্পূর্ণ কতলের (হত্যা) যোগ্য।
আল্লামাহ কাজি আয়াজ রাহিমাহুল্লাহ-র  মতে, সাহাবীদের কোন একজনকেও গালি দেয়া বা খারাপ বলা কবিরাগুনাহের অন্তর্ভুক্ত!

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী  আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]

► ইছলাহ্  কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
► https://www.facebook.com/ichlah/

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.